আর্কিটেক্ট পেশা | Architect Career | ক্যারিয়ার ক্যাটালগ

আর্কিটেক্ট পেশা | ক্যারিয়ার ক্যাটালগ : দিনদিন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অপার সম্ভাবনাময় আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হচ্ছে। প্রথম দিকে হাতেগোনা কিছু কোম্পানি ঢাকাকেন্দ্রিক বিল্ডিং ডিজাইনের ক্ষেত্রে আর্কিটেকচারাল বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করলেও বর্তমানে রাজধানীর বাইরের বড় শহরগুলোতেও বিল্ডিং এবং অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের সহায়তা নিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক মাত্রা ছাড়িয়ে ক্রেতার সংস্থাপন সংক্রান্ত বিভিন্ন চাহিদা, দুর্যোগ মোকাবেলায় ভবনের দৃঢ়তা, দীর্ঘ স্থায়িত্ব, দর্শনীয় নান্দনিকতা প্রভৃতি বিষয় দ্রুত প্রসারমান আর্কিটেক্ট ক্ষেত্রটিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পূরণ করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত: শামস্ বিশ্বস

 

[ আর্কিটেক্ট পেশা | ক্যারিয়ার ক্যাটালগ ]

 

আর্কিটেক্ট পেশা | Architect Career | ক্যারিয়ার ক্যাটালগ

 

আর্কিটেক্ট

রোজ উঁচু থেকে উচ্চতর টাওয়ার নির্মিত হয় যাদের মাঝে অসংখ্য জটিল সেতু দিয়ে জোড়া সেই সব বাড়ি, সেখানে একজন আর্কিটেক্টদের কাজ মোটেও সহজ কথা নয়। আর নগরায়নের কাজ কোন ভাবেই আর্কিটেক্টকে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। তাই যাদের এই কাজে আগ্রহও আছে তারা বেছে নিতেই পারে এই পেশা। স্থাপত্য শিল্পের সাথে নান্দনিকতা বোধের মিশেলে নতুন শহরের নতুন নতুন ইমারত তৈরি হবে তাদের হাত ধরে।

এই শাখার নানা দিক আছে। কেউ স্পেশালাইজেশন করতে পারে ল্যন্ডস্কেপ ডিজাইনে, কেউ কাজ করতে পারে আরবান প্ল্যানর হিসেবে, বা কেউ প্রাচীন স্থাপত্যের পুনর্নির্মাণে। এ ছাড়াও আছে নানা পথ। এ পেশায় নিজের উন্নতির পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা যায়। এখানে মেধা বিকাশের পাশাপাশি রয়েছে অনেক আয়ের সুযোগ। সরকারি তো বটেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও আর্কিটেক্টদের চাহিদা এখন অত্যন্ত ব্যাপক।

 

 

আর্কিটেক্ট কে?

আর্কিটেক্ট বা স্থপতি হলেন একজন ব্যক্তি যিনি ভবনের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণ ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত। স্থাপত্য অনুশীলন বলতে কোন সাইটের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সম্মিলন করে কোন ভবন এবং এর স্পেসের ডিজাইন ও নির্মাণের জন্য প্রদানকৃত পরিষেবাকে বোঝায়। ব্যুৎপত্তিগতভাবে স্থপতি শব্দটি ইংরেজি আর্কিটেক্ট (Architect) শব্দটি থেকে এসেছে। এ শব্দটি আবার ল্যাটিন আর্কিটেক্টাস থেকে এসেছে, যার উৎপত্তি গ্রীক আর্খিটেক্টন (আর্খি-, প্রধান + টেক্টন, নির্মাতা; অর্থাৎ, প্রধান নির্মাতা) থেকে।

পেশাগতভাবে একজন স্থপতির কাজ জননিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য স্থপতিকে বিশেষায়িত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অর্জন করতে হয়। স্থাপত্য চর্চার জন্য স্থপতির লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়, যা একজন স্থপতির যোগ্যতার উপর নির্ভর করে প্রদান করা হয়। স্থপতি ও স্থাপত্য শব্দ দুইটি ল্যান্ডস্কেপ স্থাপত্য, নৌযান স্থাপত্য এবং তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থপতি ও ল্যান্ডস্কেপ স্থপতি শব্দ দুইটি পেশাগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য আইন দ্বারা সুরক্ষিত।

প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ইতিহাসে অধিকাংশ স্থাপত্য নকশা ও নির্মাণ কারিগর দ্বারা সম্পন্ন হতো। প্রধান নির্মাতার ভূমিকা পালন করতো সেখানে রাজমিস্ত্রি বা ছুতারমিস্ত্রীরাই। আধুনিক সময়ের আগ পর্যন্ত স্থপতি ও প্রকৌশলী মধ্যে স্পষ্ট কোন প্রভেদ ছিলনা।

আর্কিটেক্ট একটি সৃজনশীল পেশা। এ পেশার সাথে জড়িয়ে নিজেকে একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সহজেই। যদি চাকরি করার ইচ্ছা না থাকে, তবে একটি ফার্ম চালু করে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারে। একজন স্থপতি শুধু কোন স্থাপনাকেই সৌন্দর্যমন্ডিত করেন না, বরং বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নিরিখে স্থাপনা তৈরিতেও প্রয়াসী হন। যেমন- জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সার্ক ফোয়ারা, হাতিরঝিল, মতিঝিলে অবস্থিত শাপলা চত্বরের শাপলা ফুল তৈরিতে একজন স্থপতির ভূমিকাই মুখ্য। এছাড়াও বিখ্যাত স্থাপনা যেমন- সংসদ ভবন তৈরিতেও স্থপতির ভাবনাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

এতে সৃজনশীলতার পরিচয় তো মেলেই সেই সঙ্গে পাওয়া যায় দেশে বিদেশে স্বনামে খ্যাত হওয়ার সুযোগ। মানুষের আবাসন চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী গোষ্ঠীর জন্য বিবিধ পরিকল্পনা নিয়ে আর্কিটেক্টরা কাজ করে। আর্কিটেক্ট বা স্থপতি হতে পারা যে কারো জন্য গর্বের বিষয়। উচ্চ আয় ও সামাজিক মর্যাদা দুটিই অর্জিত হয় আর্কিটেক্ট হওয়ার ভেতর দিয়ে।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

কেন আর্কিটেক্ট হওয়া?

কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রয়োজন নকশা। আর সে নকশা করেন স্থপতি বা আর্কিটেক্ট। একজন স্থপতিই নিশ্চিত করেন স্থাপনাটি পরিবেশসম্মত, ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ কি না। স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে হবু স্থপতিকে দুনিয়ার তাবৎ জিনিস সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

অধিকাংশ উন্নত দেশেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত যথাযথ লাইসেন্স, সনদ কিংবা নিবন্ধন অর্জনকারী যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই শুধুমাত্র আইনত স্থাপত্য অনুশীলন করতে পারে। এ ধরনের লাইসেন্সের জন্য সাধারণত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন, স্নাতক পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়া এবং নির্ধারিত প্রশিক্ষণকালীন সময় সফলভাবে সমাপ্ত করতে হয়। ‘স্থপতি’ বা ‘আর্কিটেক্ট’ পদবীটি কেবল মাত্র যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য আইন দ্বারা সংরক্ষিত করা হয়েছে।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

আর্কিটেক্ট হিসাবে কাজের সুযোগ

স্বল্পসম্পদ ও পরিমিত আবাসযোগ্য জমি এ দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলাতে সফলভাবে পরিকল্পনা মাফিক নগরায়ণ ও স্যাটেলাইট সিটি স্থাপন একজন সফল আর্কিটেক্ট কিংবা আর্কিটেকচারাল কোম্পানিগুলোর সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিল্ডিং ডিজাইন, স্থায়িত্ব, শৈল্পিক এবং নান্দনিক করার ক্ষেত্রে ক্রেতামুখী ও যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রটির উদ্যোক্তারা আর্কিটেক্ট বিষয়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক, তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক পড়াশোনা জানা লোকবলের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আর্কিটেক্টদের।

একটা সময় হাতেগোনা কিছু কোম্পানি ঢাকাকেন্দ্রিক বিল্ডিং ডিজাইনের ক্ষেত্রে আর্কিটেকচারাল বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করলেও বর্তমানে ঢাকা ও এর বাইরের বড় শহরগুলোতেও বিল্ডিং এবং অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের সহায়তা নিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক মাত্রা ছাড়িয়ে ক্রেতার সংস্থাপন সংক্রান্ত বিভিন্ন চাহিদা, দুর্যোগ মোকাবেলায় ভবনের দৃঢ়তা, দীর্ঘ স্থায়িত্ব, দর্শনীয় নান্দনিকতা প্রভৃতি বিষয় দ্রুত প্রসারমান আর্কিটেক্ট ক্ষেত্রটিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পূরণ করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বহু আর্কিটেকচারাল কনসালট্যান্সি ফার্ম রয়েছে, যাতে কাজ করার মতো বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব রয়েছে।

আমাদের দেশে স্থপতিদের চাকরির অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে রয়েছে স্থাপত্য অধিদপ্তর, রাজউক, কেডিএ, অরডিএ, সিডিএ, ডিসিসি, কেসিসি, আরসিসি ইত্যাদি। বেসরকারি আর্কিটেকচারাল ফার্ম ও ডিজাইনিং প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং রিয়েল এস্টেটের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহে স্থপতিদের চাকরির সুযোগ এখন অনেক বেশি। কাজের সুযোগ আছে বিদেশেও। যেমন- উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের স্থপতিদের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩০-৪০ শতাংশ স্থপতিই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

স্থপতি হবার জন্য পড়াশুনা

স্থাপত্য বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাদের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ মান অনুসারে প্রতিবছর একবার ভর্তি করানো হয়। স্থাপত্য বিভাগে ভর্তির পরীক্ষার জন্য অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর খরচ ৬-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ পড়বে অনেক কম। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় এ বিষয়ে ভর্তি হতে প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে রেন্ডারিং

 

সফল স্থপতির গুণাবলী

একজন সফল আর্কিটেক্ট হতে চাইলে যে গুণাবলী থাকা দরকার সেগুলো হল- একজন ভালো স্থপতি হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে সৃজনশীল হওয়া। দেশ-বিদেশের বড় বড় স্থাপনার নকশা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। ক্লায়েন্টের আর্থসামাজিক অবস্থা বুঝে যথাযথ প্ল্যান দিতে হবে। ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করতে থাকা চাই ভালো যোগাযোগ দক্ষতা। উদ্যমী হতে না পারলে এই পেশায় সফল হওয়াটা খুব কঠিন। কাজের মাধ্যমে নিজের প্রতিভাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী হলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া খুব সহজ হবে।

 

 

আর্কিটেক্ট-এর আয়-রোজগার

একজন আর্কিটেক্ট চাকরির শুরুতে ২০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। তবে ছয় মাসের মধ্যে সে যদি তার কাজের দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয় তাহলে তার আয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। একজন দক্ষ আর্কিটেক্ট মাসে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করে।

আমরা গুরুকুলের বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইটে সেই বিষয়ক ক্যারিয়ারের একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করছি। আপনার আগ্রহের পেশাটি দেখতে আমাদের ওই বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment