আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর ও টয়লেট/বাথরুম
Table of Contents
আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর ও টয়লেট/বাথরুম
আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর ও টয়লেট/বাথরুম
বাড়ির বাসিন্দাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্যের। আর খাদ্য প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ ও পর্যাপ্ত স্পেস বা পরিসরের রান্নার স্থান বা রান্নাঘরের। রান্নাঘরের কাজগুলোকে যদি ধারাবাহিকভাবে বলা যায় যে কোনো খাদ্য প্রস্তুতের জন্য হাঁড়ি বা পাত্র নিয়ে ধুয়ে এবং খাবার তৈরির উপকরণগুলোকে প্রয়োজনে কেটে ধুয়ে-মিশ্রিত করে নিতে হয়। এরপর আগুনে বা চুলায় রান্না করা হয়। দেখা যায় পুরো কাজটিতে প্রধান তিনটি অংশ রয়েছে যেমন—
প্রথমত : পূর্বে সংগৃহীত হাঁড়ি বা উপকরণ সংরক্ষিত স্থান [ স্টোরেজ ও মিক্সিং এরিয়া (Storage & Mixing Area)] থেকে বের করা,
দ্বিতীয়ত: খাবার তৈরির উপকরণগুলোকে প্রয়োজনে কেটে ধুয়ে-মিশ্রিত করা প্রস্তুতি ও পরিষ্কার করার এরিয়া (Preperation & Cleaning Area ) l
তৃতীয়ত: চুলায় রান্না করা কুকিং এরিয়া (Cooking Area)] এবং খাওয়ার আগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা । রান্নাঘরের এই কাজসমূহকে বিশেষণ করলে দেখা যায় কিচেন বা রান্নাঘরের বেসিক এরিয়া তিনটি—
- স্টোরেজ ও মিক্সিং এরিয়া ( Storage & Mixing Area)
- প্রস্তুতি ও পরিষ্কার করার এরিয়া (Preperation & Cleaning Area)
- কুকিং এরিয়া ( Cooking Area)
এই তিনটি বেসিক এরিয়াকে নিচের ফ্লো ডায়াগ্রামের (Flow Diagram) মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
চিত্র-৬.১.১: রান্নাঘরের বেসিক এরিয়ার ফ্লো ডায়াগ্রাম
রান্নাঘরের ওয়ার্কিং ট্রায়েলে
রান্না ঘরের তিনটি বেসিক এরিয়ার কেন্দ্র বা প্রধান তিনটি ফিকচার-এর মধ্যে সংক্ষিপ্ত দূরত্বকে লাইন যোগ করলে একটি ত্রিভুজ এর সৃষ্টি হয়, এই ত্রিভুজকেই ওয়ার্কিং ট্রায়েগেল বলে। তিনটি এরিয়ার অবস্থান এমন হবে যেন খুব বেশি হাঁটাহাঁটি করতে না হয় আবার এত কাছাকাছি হবে না যে মোড় ঘোরারও জায়গা পাওয়া যায় না। এ কারণে এটির একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।
ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেলের পরিসীমা ১২০ থেকে ২২ -০ এর মধ্যে থাকলে কাজ করতে ঘুরতে সমস্যা বা ক্লান্ত হতে হবে না।
চিত্রে (চিত্র-৬.২.১) বেসিক এরিয়ার প্রধান তিনটি ফিচার যেমন— রেফ্রিজারেটর, সিল্ক, রেঞ্জ বা চুলা। যোগ করে ওয়ার্কিং ট্রায়েগোল দেখানো হয়েছে।
চিত্র-৬.২.১: ওয়ার্কিং ট্রায়েন্সেল ও তার পরিসীমা
রান্নাঘরে ব্যবহৃত প্রধান প্রধান ফিকচার
রান্নাঘর বা কিচেনের বেসিক এরিয়াতে কাজ করার জন্য কিছু কিছু সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় যাদেরকে ফিকচার বলে, যেমন — সিংক, চুলা ইত্যাদি। এই ফিচারসমূহকে কার্যোপযোগী করার জন্য বা লাগানোর জন্য যে আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ বা Accessory ব্যবহার করা হয় তাকে ফিটিংস বলে, যেমন – ট্রাপ, পানির কল বা বিবৃ কক, ওয়াসার ইত্যাদি। রান্নাঘরের বেসিক এরিয়ার প্রধান ফিচার তিনটি হচ্ছে—
সিংক: ধোরার জন্য ব্যবহৃত হয়, এটি সিঙ্গেল, ডাবল বা ট্রিপল হতে পারে, এমনকি ধোয়ার জন্য শুধু ওয়াশ বোলটিও পাওয়া যায়। কিচেনের আকার অনুযায়ী যে কোনো ধরনের সিংক নির্বাচন করা যায়।
রেঞ্জ বা বার্নার বা চুলা: রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়, এটিও সিঙ্গেল বা ডাবল হতে পারে। বৈদ্যুতিক বা গ্যাস রেন্দ্রসমূহ সাধারণত চারটি বার্নারসই বেশি ব্যবহৃত হলেও আরও অনেক রকমের হয়ে থাকে।
ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর: তৈরি খাদ্য বা উপকরণ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়, এটির অসংখ্য রকমভেদ রয়েছে, রেফ্রিজারেটর যদিও কিচেনের ফিচার তথাপি আমাদের দেশে এটি ডাইনিং রুমেই বেশি ব্যবহার করা হয়।
নিচে রান্নাঘরের প্রধান ফিচারসমূহের নাম ও চিত্র, স্থানীয় মাপ অনুযায়ী দেয়া হল।
চিত্র-৬.৩.১: স্থানীয় মাপ অনুযায়ী প্রধান ফিচারসমূহের নাম ও চিত্র
টয়লেটে ও বাথরুমে ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়
কথিত আছে কোনো বাড়ির টয়লেট/বাথরুম দেখে বাসিন্দাদের রুচি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আবার পরিচ্ছন্ন বাথরুম শুধু সুরুচির প্রকাশই ঘটায় না সুস্বাস্থ্যেরও পরিচায়ক। আর বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজন ফিচারের সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস (Arrangement)। সাধারণ বাড়িতে তিনটি ফিচারের (বেসিন, প্ল্যান/কমোড, শাওয়ার ট্রে/কাথটাব) বাথরুমই বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টয়লেটের/বাথরুমের ফিচার।
ব্যবহারের পরিমাণ অনুযায়ী অর্থাৎ যে ফিচারটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সেই ফিকচারটি সামনে যেটি সবচেয়ে কম ব্যবহৃত হয় সেটি পিছনে এভাবে সাজালে বসালে কাজের বা ব্যবহারের সুবিধা হয়। নিচে টয়লেটে ও বাথরুমে ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়সমূহ আলোচিত হল-
- যে ফিচারটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সেই ফিচারটি সামনে বিন্যাস বা অ্যারেঞ্জ করতে হবে, যেমন— বেসিন বা লেডেটরি।
- বেসিনের আয়নার (Mirror/Looking Glass) অবস্থান জানালার বিপরীতে বসানো যাবে না। এতে আয়নায় আলোর প্রতিফলনের জন্য মুখ অন্ধকার দেখায়।
- বেসিন জানালার পাশে বসালে ভালো হয় এবং কর্ণার দেয়াল ঘেঁষে বসালে পাশের দেয়াল থেকে ভিতর দিকে কমপক্ষে 4″ -6″ জায়গা ছেড়ে দিয়ে বসাতে হবে।
- বেসিন 30″ -33″ উঁচুতে বসাতে হবে। তবে সাধারণ উচ্চতার মানুষের জন্য 33″ উঁচুতে বসানো ভালো।
- বেসিনের পরে কমোড বা W. C. এর অবস্থান হওয়া ভালো। তবে লং প্ল্যান হলে স্বাস্থ্যগত কারণে পিছনে দেয়াল এর সাথে বসানো ভাল।
- কমোড বা বেসিন এরূপ উঁচু দুটি ফিচার পাশাপাশি হলে এদের মধ্যে কমপক্ষে 14″ -16″ ফাঁকা রাখতে হবে।
- গোসলের জন্য শাওয়ার ট্রে বা বাথটাব দিতে হবে, সম্ভব না হলে গোসল করার স্থানটিকে নিচু করে 9-12″ দেয়ালের মত রেলিং তৈরি করে পাওয়ার কার্টেন পর্দা দিয়ে দিলে পানি চারদিকে ছড়ায় না ।
- লং প্যানসহ বাখরুম হলে গোসলের জায়গা পিছনে সেরা না গেলে প্যানের স্থানটিকে দরজার মত অংশ রেখে বাকি অংশে 15″ -30″ দেয়ালের মত রেলিং তৈরি করে দিয়েও গোসলের জায়গাটি আলাদা করে দেয়া যায়।
- লম্বা বাথরুম/টয়লেটের মধ্যে দরজা দিয়ে একদিকে কমোড, অন্যদিকে রেইল (Rail) দিয়ে শাওয়ার, মধ্যে বেসিনের বিন্যাস করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে বাথরুমটি সারাক্ষণ ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে না এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয় ।
- ফিচারসমূহ এক বরাবর হলে পাইপ বসানো এবং নিষ্কাশনে সুবিধা হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ট্রাফিক বা চলাচলের জন্য স্পেসটি বরাবর সোজা জায়গার অপচয় কম হয় এবং বাথরুম বা ফিচার ব্যবহার করার সময় সুবিধা পাওয়া যায় ।
- টাওয়েল রেইল, সোপ কেস বা সাবান দানি গোসলের জায়গা থেকে দূরে রাখতে হবে, যেন পানি ছিটে কাপড় বা টাওয়েল বা সাবান ভিজে না যায়।
- ১ টয়লেট বা বাথরুমে গীজার (Geezer)/ ওয়াটার হিটার (Water Heater) / ইলেকট্রিক শেভার (Electric Shaver) ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও এসব ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত সুইচ বা এ জাতীয় ফিটিংস-এর অবস্থান পানি থেকে দূরে রাখতে হবে।
কিচেন, টয়লেটে ও বাথরুমের ভেন্টিলেশন
আমাদের দেশে অনেকেই কিচেন ও টয়লেট/বাথরুম নির্মানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় না। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, “কিচেন বা রান্নাঘর হচ্ছে কোনো বাড়ির বাসিন্দাদের খাদ্য যোগানের এলাকা আর টয়লেট বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাকারী এলাকা। সঠিক ডিজাইন, রক্ষণাবেক্ষণের ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে কিচেন বা রান্নাঘর হয়ে উঠে তাপ উৎপাদনকারী এলাকা আর টয়লেট/বাথরুম রোগ-জীবাণু উৎপাদনকারী এলাকা” । সঠিক ডিজাইন ও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে ভেন্টিলেশন ।
ভেন্টিলেশন বলতে সহজ ভাষায় কোনো কক্ষেরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকাকে বোঝায়। বাইরের প্রাকৃতিক নির্মল বাতাস দিয়ে রুমের ভিতরের ব্যবহৃত (দূষিত, জীবাণুযুক্ত, গ্যাস মিশ্রিত, ঘাম বা দুর্গন্ধ যুক্ত বাতাসকে অপসারণ করার প্রক্রিয়াকে ভেন্টিলেশন বলে। প্রত্যেক রুমেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও কিচেন ও টয়লেটে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কিচেন ও টয়লেটে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিচে আলোচনা করা হল—
- কিচেনের গ্যাস, ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি অপসারণের জন্য কিচেন হুড বা চিমনি (বর্তমানে ততটা ব্যবহার হয় না) বা এগজস্ট ফ্যান (Exhaust Fan) ব্যবহার করতে হবে।
- যতদূর সম্ভব বড় জানালা (কেবিনেট তৈরির সুবিধার্থে ৩৬” উচ্চতায়) তৈরি করতে হবে।
- কিচেন হুড ব্যবহার করা হলে ডাইনিং বরাবর একটি পাঞ্চ বা ফোঁকর রাখা যেতে পারে, যাতে তৈরি খাবার পরিবেশন (Serve) করা যায় আবার বাতাসও চলাচল করতে পারে।
- কিচেন ও টয়লেট উভয় ক্ষেত্রে তাপ শোষণকারী রং ও ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা যেতে পারে। তাপ শোষণের জন্য জানালার সিলে টবে গাছও রাখা যায়, এতে দুর্গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত গ্যাসও অপস- ারিত হয় ।
- সঠিক ভেন্টিলেশনের জন্য কিচেনের মেঝের আয়তনের কমপক্ষে ১৫% অংশ জানালা রাখতে হবে।
- টয়লেট ছোট হলেও বাইরের দেয়ালে (Main / Exterior Wall) একটি জানালার ব্যবস্থা করতে পারে ।
- গ্যাস, দুর্গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি অপসারণের জন্য এগজস্ট ফ্যান (Exhaust Fan) ব্যবহার করতে হবে।
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ইমারতের রান্নাঘরের বেসিক এরিয়াসমূহের নাম লিখ ।
২. কিচেনের ওয়ার্কিং ট্রারেজেল এর পরিসীমার মাপ কত ?
৩. কিচেনের বেসিক এরিয়াকে ফ্লো ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ কর।
৪. টয়লেটের প্রধান ফিচারসমুদ্রের নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. রান্নাঘরের ওয়ার্কিং ট্রারেঙ্গেল চিত্রসহ ব্যাখ্যা কর ।
২. রান্নঘরের প্রধান ফিচারসমূহের নাম ও স্থানীয় মাপ চিত্র একে দেখাও।
৩. টয়লেটের প্রধান তিনটি ফিচার-এর নাম ও স্থানীয় মাপ চিত্র একে দেখাও।
৪. টয়লেটে ব্যবহৃত ফিচারসমূহের নাম ও ব্যবহার লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. রান্নাঘরের ফিচার সত্ত্বানুযায়ী শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।
২. রান্নাঘরে ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয় বর্ণনা কর।
৩. কিচেন, টয়লেটে ও বাথরুমের ভেন্টিলেশন বর্ণনা কর ।
৪. টয়লেটে ও বাথরুমে ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর।
আরও দেখুন :