আজকে আমরা আর্কিটেকচারে রেন্ডারিং সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড – ২ এর অন্তর্গত।
Table of Contents
আর্কিটেকচারে রেন্ডারিং
বস্তু বা বিল্ডিং-এর মূল কাঠামো তৈরির জন্য রেখার সাহায্যে দেয়াল, মেঝে, ছাদ, দরজা, জানালা ইত্যাদি আঁকা হয়। কিন্তু বস্তুটি বা দেয়াল, দরজা, জানালা ইত্যাদি কি কি উপকরণ দিয়ে তৈরি বা কোথাও এতে উঁচু নিচু আছে কিনা তা বোঝা যায় না। এসব বোঝানোর জন্য এতে আনুষঙ্গিক আরও কিছু রেখা কিংবা শেড-শ্যাডো, রং ইত্যাদির প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে বস্তুকে বাস্তবসম্মত করে ফুটিয়ে তোলা যায়। বস্তুকে বা ড্রয়িংকে এরূপ বাস্তবিক রূপে ফুটিয়ে তোলাকে রেন্ডারিং (Rendering) বলে।
কোনো বস্তুকে বা ড্রয়িংকে গ্রাফিক্স বা বিন্দু, রেখা, তল, শেড-শ্যাডো, রং ইত্যাদির সাহায্যে বা বাস্তবসম্মত করে উপস্থাপন করার কৌশলকেই রেন্ডারিং (Rendering) বলে।
ড্রয়িংকে বাস্তবসম্মত করে ফুটিয়ে তোলার জন্য বা রেন্ডারিং (Rendering) করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। গ্রাফিক্স বা বিন্দু, রেখা, তল, শেড-শ্যাডো ইত্যাদি অঙ্কনের জন্য যে সকল উপাদান প্রয়োজন তাকেই রেন্ডারিং-এর মাধ্যম বলে।
রেন্ডারিং করার মাধ্যমসমূহ নিম্নরূপ-
- পেনসিল (Pencil)
- ড্রাফটিং পেন ও কালি (Drafting Pen & Ink )
- রং (Color)
- চারকোল (Charcoal) এবং
- এয়ার ব্রাশ (Air Brush )
রেন্ডারিং (Rendering) করার প্রয়োজনীয়তা
ড্রয়িং একটি খাঁচা হলে রেন্ডারিং (Rendering) এর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে। কাজেই ড্রয়িং মানে শুধু প্রাণহীন খাঁচা তৈরিই নয় একে প্রাণবন্ত করে তোলাও বটে।
রেন্ডারিং (Rendering) করার প্রয়োজনীয়তা নিম্নে আলোচনা করা হলো—
- ড্রয়িংকে বাস্তবসম্মত করে উপস্থাপন করা,
- বিল্ডিং বা বস্তুতে ব্যবহৃত নির্মাণ উপকরণ দেখানো,
- বিল্ডিং বা বস্তুতে উঁচু নিচু বা গভীরতা দেখানো,
- দৃশ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রাধান্য তৈরি করার জন্য,
- রং ব্যবহার করে বস্তুর বাস্তবিক রং প্রকাশের জন্য,
- ড্রয়িং-কে সাধারণ জনগণের কাছে বোধগম্য করার জন্য,
- শেড-শ্যাডো দিয়ে আলো-ছায়ার বা সৌরতাপের অবস্থান দেখানোর জন্য ।
রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
পেনসিল দিয়ে রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
- সূক্ষ্ম কাজ করার সময় পেনসিলের মাথা সুচালো করে নিতে হবে।
- শেড দেয়ার সময় একটু ঢালু করে ফ্লাট বা সমতল করে নিতে হবে।
- রেন্ডারিং-এর জন্য নরম পেনসিল ব্যবহার করা ভালো তবে অভিজ্ঞতা না থাকলে বেশি নরম পেনসিল না ব্যবহার করাই ভালো। পরিষ্কার রাখার জন্য ডাস্টার ব্যবহার করতে হবে।
- ডট লাইন, পেনসিল সমতল করে বিভিন্নভাবে একটি বস্তুকে রেভারিং করা যায়।
ড্রাফটিং পেন ও কালি দিয়ে রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
- ড্রাফটিং পেন ও কালি দিয়ে রেন্ডারিং করার সময় সম্পূর্ণ কাগজটি নরম ইরেজার দিয়ে মুছে নিতে হবে।
- রেন্ডারিং করার জন্য বা শেড শ্যাডো আঁকার জন্য সূক্ষ্ম পয়েন্টের কলম ব্যবহার করতে হবে।
- রুমালে একটু পরপর কলমের নিব মুছে নিতে হবে। কলমের দাগ মুছার চেষ্টা না করাই ভালো।
- পেনসিল ৰাকা করে ধরে কাজ করলেও ড্রাফটিং পেন শিটের সাথে লক্ষ করে ধরে কাজ করতে হবে।
চারকোল দিয়ে রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
- সাধারণত রাস্তা, অনেক অংশ কালো বা কালচে শেড করার জন্য চারকোল বেশি উপযোগী। অনেক অংশ জুড়ে শেড করার সময় আশেপাশের অংশ কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
- শিটের উপর থেকে নিচের দিকে শেড বা চারকোলের কাজ করতে হবে। তা না হলে হাতে চারকোলের অংশ লেগে বা হাতের ঘষায় শিট সম্পূর্ণ কালচে হয়ে যাবে।
এয়ার ব্রাশ দিয়ে রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
- এয়ার ব্রাশ এক ধরনের স্প্রে রং, এটি দিয়ে রং করার সময় আশেপাশের অংশ কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
- হালকাভাবে রং করার জন্য দ্রুত হাতে স্প্রে করতে হবে। গাঢ় করার জন্য ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে রং বা স্প্রে করতে হবে।
- রং করার পর শুকানারে জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এয়ার ব্রাশ না থাকলে শক্ত রং তুলি বা পুরনো টুথব্রাশ রঙে ডুবিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে রং ছিটিয়ে বা স্প্রে করা যায়। এভাবে খুব ছোটো অংশে রং করার জন্য ভালো।
রং দিয়ে রেন্ডারিং (Rendering) করার কৌশল
- রং ব্যবহারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রঙের বৈচিত্র্য তা যেমন বস্তুকে দৃষ্টিনন্দন করে তেমনি অতিরঞ্জিত বা রঙের আধিক্য সম্পূর্ণ ড্রয়িংকে নষ্ট করে দিতে পারে।
- রং ব্যবহারের সময় সরু, মোটা বা ফ্লাট, এবং মাঝারি সব রকমের তুলি ব্যবহার করতে হবে।
- একটি রং ব্যবহার করার পর ভালোভাবে ধুয়ে শুকায়ে বা পানি ঝরিয়ে নিতে হবে যেন কোনো প্রকার রং না লেগে থাকে। এতে পরবর্তী রং ব্যবহার করার সময় রঙের শেড সঠিক পাওয়া যাবে।
- রং করার পর শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
রেন্ডারিং করার সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার রং বা Color-এর মনস্তাত্ত্বিক অর্থ
(ক) লাল: দৃষ্টি আকর্ষক,ভাবাবেগ, ক্রোধ, উত্তেজিত, প্রফুল্ল।
(খ) নীল: সত্য, আনুগত্য, কষ্ট, আকাশ, দৃঢ়।
(গ) হলুদ: উষ্ণতা, প্রফুল্লতা, বিবর্ণতা, ঈর্ষা, বসন্ত, ভালোবাসা।
(ঘ) কালো: শোক, অন্ধকার, দুঃখ, নিরাশ হওয়া।
(ঙ) সবুজ: আশা, শীতলতা, নমনীয়তা, সচ্ছলতা, প্রাণচঞ্চল, স্বতঃস্ফুর্ত।
(চ) বেগুনি: ন্যায়পরায়ণতা, মানসিক বা দৈহিক দুঃখ-কষ্ট সকল-রং-কে শোষণ করে নেয়।
(ছ) সাদা: পবিত্রতা, শান্তি, বিশ্বাস, পরিচ্ছন্নতা, প্রসন্নতা, উদারতা।
(জ) ধূসর: বিনয়, নম্রতা, প্রায়শ্চিত্ব, মলিনতা বা ম্লান ।
(ঝ) স্বর্ণ: রাজমর্যাদা বা রাজকীয়, বিলাসবহুল, ক্ষমতা।
(এ) রুপা: রাজমর্যাদা বা রাজকীয়, বিলাসবহুল।
প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. রেন্ডারিং কাকে বলে?
২. রেন্ডারিং-এর মাধ্যমসমূহের নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. আর্কিটেকচারে রেন্ডারিং-এর প্রয়োজনীয়তা লেখ।
২. রেন্ডারিং-এ রঙের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. মুক্তহস্তে অঙ্কনে স্কেলিং-এর ব্যবহার বিধি বর্ণনা কর।
২. রেন্ডারিং-এর মাধ্যমসমূহের ব্যবহার বর্ণনা কর।
৩. রেন্ডারিং-এর বিভিন্ন কৌশল বর্ণনা কর।
৪. মানুষের মুখ অঙ্কন করে রেন্ডারিং কর।
৫. মুক্তহস্তে একটি ইট অঙ্কন করে রেন্ডারিং কর ।
৬. মুক্তহস্তে একটি গাছ অঙ্কন করে রেন্ডারিং কর।
আরও দেখুনঃ