আজকের আলোচনার বিষয় ইমারতের দরজা ও জানালা। যেকোনো ইমারত কিছু নির্দিষ্ট কক্ষ বা কক্ষসমষ্টি নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ, অবস্থান এবং আসবাবপত্র বা অন্যান্য সামগ্রী আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে কক্ষের দেয়ালের নির্দিষ্ট অংশ খালি রাখা হয়। এই খালি অংশে প্রয়োজনে খোলা বা বন্ধ করার উপযোগী ব্যবস্থা থাকলে তাকে দরজা বলা হয়।
অর্থাৎ, কক্ষের মধ্যে যাতায়াত, আসবাবপত্র ও মালপত্র প্রবেশ বা বহির্গমন, এবং প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সুনিয়ন্ত্রিত খোলা–বন্ধ করার ব্যবস্থা সম্বলিত ফাঁকা স্থানই দরজা।
অন্যদিকে, কক্ষের ভিতরে প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস প্রবেশের জন্য বাইরের দেয়াল বা প্রধান (মেইন) দেয়ালে খালি জায়গা রাখা হয়, যা খোলা–বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকে, তাকে জানালা বলা হয়।
জানালা সাধারণত মানুষ, মালপত্র বা আসবাবপত্র আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় না। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
আলো ও বাতাস প্রবেশ নিশ্চিত করা
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা
বাইরের দৃশ্য উপভোগের সুযোগ দেওয়া
Table of Contents
ইমারতের দরজা-জানালা
ইমারতের দরজা ও জানালা
যেকোনো ইমারত কয়েকটি কক্ষ বা কম্পার্টমেন্ট নিয়ে গঠিত হয়।
প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ, অবস্থান এবং আসবাবপত্র ভেতরে রাখা বা বের করার সুবিধার্থে কক্ষের দেয়ালে নির্দিষ্ট অংশ খালি রাখা হয়। গোপনীয়তা (Privacy) বজায় রাখার জন্য এই ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে খোলা বা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা থাকে। এই খোলা–বন্ধ করার ব্যবস্থা-সংবলিত ফাঁকা স্থানকে দরজা বলা হয়।
অর্থাৎ, কক্ষের মধ্যে যাতায়াত এবং আসবাবপত্র বা মালপত্র আনা–নেওয়ার জন্য সুনিয়ন্ত্রিত খোলা–বন্ধ করার সুবিধাসহ যে ফাঁকা স্থান থাকে সেটিই দরজা।
অন্যদিকে, কক্ষে আলো ও বাতাস প্রবেশের জন্য বাইরের দেয়াল বা প্রধান দেয়ালে খালি জায়গা রাখা হয়, যা খোলা–বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকে, তাকে জানালা বলা হয়।
জানালা দিয়ে সাধারণত মানুষ বা আসবাবপত্র আনা–নেওয়া করা হয় না। এর মূল উদ্দেশ্য—
- প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ নিশ্চিত করা
- বায়ু চলাচলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা
- বাইরের দৃশ্য দেখার সুযোগ দেওয়া
বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত দরজার সাধারণ মাপ
আবাসিক ভবনের দরজার মাপ কাজ বা ব্যবহার অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত নিচের মাপগুলো ব্যবহৃত হয়—
দরজার ধরন | প্রস্থ (ফুট–ইঞ্চি) | উচ্চতা (ফুট–ইঞ্চি) | বিশেষ মন্তব্য |
প্রধান প্রবেশদ্বার (Main Door) | 3′-6″, 5′-0″ (দুই পাল্লা হলে 5′-6″) | 7′-0″ | শোভন ও মজবুত দরজা ব্যবহার করা হয় |
শয়নকক্ষ, লিভিং রুম, ফ্যামিলি রুম | 3′-4″ বা 3′-6″ | 7′-0″ | সাধারণত এক পাল্লার |
লিভিং ও ডাইনিং রুমের মাঝের দরজা | 4′-2″ থেকে 7′-6″ | 7′-0″ | পাল্লা ছাড়া ওপেনিংও হতে পারে |
স্টাডি রুম | 3′-0″ বা 3′-4″ | 7′-0″ | নকশা অনুযায়ী পরিবর্তনযোগ্য |
রান্নাঘর | 2′-6″ বা 3′-0″ | 7′-0″ | সহজ যাতায়াত ও বায়ু চলাচল নিশ্চিত করে |
টয়লেট/বাথরুম | 2′-1″ বা 2′-6″ | 7′-0″ | গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সঠিক উপকরণ প্রয়োজন |
গ্যারেজ | 7′-11″ বা 10′-0″ | 7′-0″ | যানবাহন প্রবেশের উপযোগীভাবে ডিজাইন করা হয় |
দরজার (Door) শ্রেণিবিভাগ;
দরজাকে এর উপাংশের বিন্যাস, নির্মাণ পদ্ধতি, কাজের প্রকৃতি এবং উপাদান অনুসারে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—
উপাংশের বিন্যাস অনুযায়ী দরজার প্রকারভেদ
এই শ্রেণিবিন্যাস মূলত দরজার কাঠামোগত নকশা ও ফ্রেমের বিন্যাসের ওপর নির্ভরশীল।
- ব্যাটেনড এবং লেজড ডোর (Battened and Ledged Door) – কাঠের উল্লম্ব পাত (Batten) এবং অনুভূমিক পাত (Ledger) দ্বারা গঠিত সাধারণ দরজা।
- ব্যাটেনড, লেজড এবং ব্রেসড ডোর (Battened, Ledged and Braced Door) – ব্যাটেন ও লেজারের সঙ্গে ত্রিভুজাকার Brace যুক্ত থাকে, যা দরজার শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
- ব্যাটেনড, লেজড এবং ফ্রেমড ডোর (Battened, Ledged and Framed Door) – কাঠামোতে ফ্রেম সংযুক্ত থাকে, যা দৃঢ়তা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
- ব্যাটেনড, লেজড, ব্রেসড এবং ফ্রেমড ডোর (Battened, Ledged, Braced and Framed Door) – সর্বোচ্চ শক্তিশালী কাঠামো; এতে Brace ও Frame দুটোই থাকে, যা ভারী ও বহুল ব্যবহৃত স্থাপনায় উপযোগী।
নির্মাণ পদ্ধতি অনুযায়ী দরজার প্রকারভেদ
দরজার তৈরির কৌশল ও উপাদান সংযুক্তির ধরন অনুযায়ী এই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়—
- ফ্রেমড এবং প্যানেলড ডোর (Framed and Paneled Door) – কাঠ বা ধাতব ফ্রেমের মধ্যে কাঠ, প্লাইউড বা গ্লাসের প্যানেল বসানো হয়।
- গ্লেজড বা সাশ ডোর (Glazed or Sash Door) – আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে কাচযুক্ত দরজা, আলো প্রবেশ করানোর জন্য উপযোগী।
- ফ্লাশ ডোর (Flush Door) – সমান পৃষ্ঠবিশিষ্ট মসৃণ দরজা, যা দেখতে সুন্দর ও রক্ষণাবেক্ষণে সহজ।
- লুভার্ড ডোর (Louvered Door) – বায়ু চলাচল ও আংশিক আলো প্রবেশের জন্য তির্যক স্ল্যাটযুক্ত দরজা।
- ওয়্যার গেজড ডোর (Wire Gauzed Door) – তারের জালি যুক্ত দরজা, যা বাতাস প্রবাহ বজায় রাখে এবং কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ করে।
কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী দরজার প্রকারভেদ
দরজার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য ও চলাচলের ধরন অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়—
- রিভলভিং ডোর (Revolving Door) – কেন্দ্রীয় অক্ষে ঘূর্ণনশীল দরজা, যা বড় বড় ভবনে ব্যবহৃত হয়।
- স্লাইডিং ডোর (Sliding Door) – রেল ট্র্যাকে স্লাইড করে খোলে ও বন্ধ হয়, স্থান সাশ্রয়ী।
- সুইং ডোর (Swing Door) – উভয় দিকে ঘুরে খোলা ও বন্ধ হয়, সাধারণত রেস্টুরেন্ট বা অফিসে ব্যবহৃত হয়।
- কলাপসিবল স্টিল ডোর (Collapsible Steel Door) – ভাঁজ করে খোলা-বন্দ করা যায়, গ্যারেজ ও নিরাপত্তামূলক স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।
- রোলিং স্টিল শাটার ডোর (Rolling Steel Shutter Door) – ধাতব শাটার যা রোল করে ওপরে ওঠে, দোকানপাট ও গুদামে প্রচলিত।
মেটাল দরজার প্রকারভেদ
শুধুমাত্র ধাতব উপাদানে নির্মিত দরজার শ্রেণিবিন্যাস—
- মাইল্ড স্টিল শিট ডোর (Mild Steel Sheet Door) – সাধারণ স্টিল শিট দিয়ে তৈরি, টেকসই ও নিরাপদ।
- করুগেটেড স্টিল শিট ডোর (Corrugated Steel Sheet Door) – ঢেউখেলানো স্টিল শিট দিয়ে তৈরি, যা অধিক শক্তি প্রদান করে।
- হলো মেটাল ডোর (Hollow Metal Door) – ফাঁপা ধাতব কাঠামো, হালকা ও সহজে স্থাপনযোগ্য।
- মেটাল কভারড প্লাইউড ডোর (Metal Covered Plywood Door) – প্লাইউডের উপর ধাতব আবরণযুক্ত, যা টেকসই ও আর্দ্রতা প্রতিরোধী।
বিভিন্ন প্রকার দরজার নাম এবং প্ল্যান, এলিভেশন ও ত্রিমাত্রিক দৃশ্যে ব্যবহৃত দরজার প্রতীক
কক্ষে দরজার (Door) অবস্থান:
দরজার সঠিক অবস্থান কক্ষের কার্যকারিতা, আসবাব সজ্জা এবং গোপনীয়তার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই দরজা বসানোর সময় নিচের বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত—
১. দেয়ালের সাথে দরজার অবস্থান
- দরজা কক্ষের একপাশে, দেয়াল ঘেঁষে বসানো হলে জায়গার অপচয় কমে।
- মাঝখানে দরজা থাকলে কার্যকর জায়গা কমে যায়, তাই সম্ভব হলে দেয়ালের প্রান্তে রাখা ভালো।
- দেয়ালের সাথে দরজা রাখলে আসবাবপত্র সাজানো সহজ হয় এবং কক্ষের ব্যবহারযোগ্য স্থান বৃদ্ধি পায়।
কক্ষের মাঝে দরজা থাকলে কার্যকর জায়গা কমে যায় দরজা দেয়াল ঘেঁষে থাকায় কার্যকর জায়গা বেশি পাওয়া যায়
২. দরজার সংখ্যা ও যাতায়াতের সুবিধা
- একটি কক্ষে দরজার সংখ্যা যতটা সম্ভব কম রাখা উচিত, যাতে গোপনীয়তা বজায় থাকে এবং স্থান অপচয় না হয়।
- যদি বাথরুম, বারান্দা বা অন্যান্য সংযোগের কারণে একাধিক দরজা প্রয়োজন হয়, তবে সেগুলো এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে কম দূরত্ব অতিক্রম করে যাতায়াত করা যায়।
৩. আসবাব সজ্জার সাথে সামঞ্জস্য
- দরজার অবস্থান ঠিক করার আগে কক্ষে কী কী আসবাব থাকবে এবং সেগুলোর বিন্যাস কেমন হবে তা বিবেচনা করা জরুরি।
- যদি দেয়াল ঘেঁষে দরজা বসানো সম্ভব না হয়, তবে দেয়াল থেকে এমন দূরত্বে বসাতে হবে যা একটি আসবাবের (যেমন আলমারি) চওড়ার সমান হয়। এতে দরজার পেছনে আসবাবপত্র রাখা সম্ভব হয়।
দেয়াল থেকে একটু দূরত্বে পরা
৪. গোপনীয়তা নিশ্চিত করা
- দরজা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে প্রধান প্রবেশদ্বার থেকে কক্ষের ভেতর সরাসরি দেখা না যায়।
- বসার ঘর (লিভিং রুম) দিয়ে সরাসরি প্রধান প্রবেশদ্বার রাখা উচিত নয়।
- বারান্দা বা ডাইনিং রুম দিয়ে আলাদা একটি সার্ভিস দরজা রাখা ভালো।
- দরজার পাল্লা খোলার সময় এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে খোলা পাল্লা বাড়ির ভেতরের অংশ আড়াল করে দেয়।
৫. রান্নাঘর ও বাথরুমের দরজার অবস্থান
- রান্নাঘরের দরজা লিভিং রুম থেকে সরাসরি দৃশ্যমান না হয়ে মেইন ডোরের কাছাকাছি কিন্তু আড়ালে থাকা উচিত।
- লম্বাটে বাথরুমের ক্ষেত্রে দরজা রুমের মাঝ বরাবর স্থাপন করা ভালো, যাতে একপাশে কমোড বা লং প্যান, অন্যপাশে শাওয়ার স্পেস এবং মাঝখানে বেসিন রাখা যায়। এতে রুম স্যাঁতস্যাঁতে হয় না এবং ব্যবহারও আরামদায়ক হয়।
৬. বারান্দার দরজা
- বারান্দার দরজা অবশ্যই বাইরের দিকে খোলার মতো হতে হবে, যাতে অভ্যন্তরীণ স্থান সাশ্রয় হয় এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
জানালার (Window) শ্রেণিবিভাগ:
ইমারতের ধরন, নকশা, আলোর প্রয়োজন, বায়ু চলাচল এবং সৌন্দর্যের দিক বিবেচনা করে জানালাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। নিচে সাধারণত ব্যবহৃত জানালার ধরনগুলো তুলে ধরা হলো—
১. কাঠামো ও খোলার পদ্ধতির ভিত্তিতে
- ফিক্সড উইন্ডো (Fixed Window): স্থায়ীভাবে বসানো, খোলা বা বন্ধ করার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র আলো প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পিভোটেড উইন্ডো (Pivoted Window): উল্লম্ব বা অনুভূমিক অক্ষ বরাবর ঘুরে খোলে।
- ডাবল হাং উইন্ডো (Double Hung Window): দুটি স্যাশ উপরে-নিচে সরিয়ে খোলা যায়।
- স্লাইডিং উইন্ডো (Sliding Window): অনুভূমিক বা উল্লম্বভাবে স্লাইড করে খোলা ও বন্ধ করা যায়।
- ক্যাসমেন্ট উইন্ডো (Casement Window): একপাশে কব্জা দিয়ে লাগানো, দরজার মতো বাইরে বা ভিতরে খোলে।
- সাশ উইন্ডো (Sash Window): কাঠ বা ধাতব ফ্রেমে কাচ লাগানো, উল্লম্ব বা অনুভূমিকভাবে নড়াচড়া করে।
- লুভার্ড বা জালৌসী উইন্ডো (Louvered or Jalousie Window): সমান্তরাল ঢালু পাতের সমন্বয়ে তৈরি, বাতাস প্রবাহিত হয় কিন্তু সরাসরি দৃশ্য ঢেকে রাখে।
২. বিশেষ নকশা ও অবস্থানভিত্তিক
- মেটাল উইন্ডো (Metal Window): ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম বা অন্যান্য ধাতু দ্বারা নির্মিত।
- ক্লিয়ার স্টোরি উইন্ডো (Clear Storey Window): ছাদের নিচে বা উঁচু অংশে বসানো, প্রধানত আলো প্রবেশের জন্য।
- বে উইন্ডো (Bay Window): দেয়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা, নান্দনিকতা ও আলো বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- কর্ণার উইন্ডো (Corner Window): কক্ষের কোনায় বসানো, দুই পাশ থেকেই দৃশ্য ও আলো পাওয়া যায়।
- ডর্মার উইন্ডো (Dormer Window): ঢালু ছাদের ওপর উঁচু করে বসানো, অ্যাটিক বা লফটে আলো-বাতাস প্রবেশ করায়।
- গ্যাবল উইন্ডো (Gable Window): ত্রিভুজাকার গ্যাবল প্রাচীরে বসানো।
- ল্যান্টার্ন উইন্ডো (Lantern Window): ছাদের উপরে উঁচু কাঠামোয় লাগানো, চারপাশ থেকে আলো প্রবেশ করায়।
৩. আলো ও বায়ু চলাচল বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ধরনের
- স্কাইলাইট (Sky Light): ছাদের সমতলে বসানো, প্রাকৃতিক আলো আনার জন্য।
- ফ্যান লাইট (Fan Light): দরজার উপরের অর্ধবৃত্তাকার বা খিলান আকৃতির কাচের অংশ।
- ভেন্টিলেটর (Ventilator): উঁচু স্থানে লাগানো, বায়ু চলাচলের জন্য।
- সান লাইট (Sun Light): সূর্যের আলো প্রবেশের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা জানালা।
কক্ষে জানালার (Window) অবস্থা:
একটি কক্ষে জানালার অবস্থান নির্ধারণের সময় কক্ষের আকার, আকৃতি, ব্যবহার, প্রাকৃতিক আলো, বায়ু চলাচল এবং নান্দনিকতা—সবকিছু বিবেচনায় নিতে হয়। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানালার অবস্থান নির্ধারণ করলে কক্ষটি হবে আরামদায়ক, স্বাস্থ্যকর এবং দৃষ্টিনন্দন।
১. কক্ষের ধরন ও ব্যবহার বিবেচনা
- কক্ষের আকার ও আকৃতি, এবং এর প্রধান ব্যবহার অনুযায়ী জানালার সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণ করা উচিত।
- রুমের এরিয়ার অন্তত ১/৩ অংশ জানালা রাখা উচিত, যাতে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস প্রবেশ করে। তবে আসবাবপত্রের বিন্যাস ও প্রাইভেসি নিশ্চিত করাও জরুরি।
২. প্রাকৃতিক আলো ও সূর্যের দিক
- সূর্যের আলোর দিক, তাপমাত্রা এবং ঋতুগত পরিবর্তন বিবেচনা করে জানালার অবস্থান নির্ধারণ করা উচিত।
- দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী জানালায় সরাসরি সূরতাপ বেশি পড়ে, যা গ্রীষ্মে কক্ষে অতিরিক্ত গরম তৈরি করতে পারে।
- রান্নাঘরের জানালা দক্ষিণ দিকে না দেওয়াই ভালো, যাতে অতিরিক্ত গরম ও অস্বস্তি এড়ানো যায়।
৩. বায়ু চলাচল ও ভেন্টিলেশন
- সঠিক ভেন্টিলেশনের জন্য বেডরুম ও সম্ভব হলে লিভিং রুমে বিপরীত দেয়ালে জানালা রাখা উচিত।
- বিপরীত দেয়ালে জানালা থাকলে সেটিকে ক্রস ভেন্টিলেশন (Cross Ventilation) বলা হয়, যা গরম বাতাস বের করে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করায়।
- টয়লেট ও বাথরুমে ছোট হলেও একটি জানালা রাখা অপরিহার্য, যাতে আর্দ্রতা ও গ্যাস নির্গমন সম্ভব হয়।
৪. সিল লেভেল ও জানালার উচ্চতা
- বহুতল ভবনে আলো-বাতাসের স্বল্পতার কারণে সিল লেভেল (জানালার নিচের অংশের উচ্চতা) সাধারণত ৩০ ইঞ্চি থেকে কমিয়ে ১২–২৪ ইঞ্চি রাখা হয়, যাতে বসে বা শোয়েও বাইরের দৃশ্য দেখা যায় এবং আলো প্রবেশ বাড়ে।
৫. আসবাবপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য
- জানালার অবস্থান এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন বড় আসবাবপত্র বসানোর জায়গা ব্যাহত না হয়।
- আসবাবের সামনে জানালা না থাকাই ভালো, যাতে প্রাকৃতিক আলো বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কক্ষের নকশা সুন্দর থাকে।
৬. নান্দনিকতা ও দৃশ্যমানতা
- জানালার অবস্থান এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে বাহ্যিক দৃশ্য, বাগান বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
- ভবনের সামগ্রিক নান্দনিকতা বজায় রাখতে জানালার আকার ও অবস্থান সুষম হওয়া জরুরি।
অ্যালুমিনিয়ামের দরজা জানালার (Aluminum Door Window) প্রয়োজনীয়তা:
অ্যালুমিনিয়ামের দরজা ও জানালা আধুনিক স্থাপত্যে মেটাল দরজা-জানালার অন্যতম জনপ্রিয় বিকল্প, যা বর্তমানে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প স্থাপত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্লাইডিং ব্যবস্থা, যা পাল্লা খোলার জন্য অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। যদিও স্লাইডিং সিস্টেমে একসময় অর্ধেক অংশ বন্ধ থাকে, তবুও প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলো ও বাতাস চলাচল নিশ্চিত হয়।
১. স্থান সাশ্রয়ী ডিজাইন
- স্লাইডিং সিস্টেমের কারণে পাল্লা খোলার জন্য বাড়তি জায়গা লাগে না, যা ছোট বা সঙ্কীর্ণ জায়গায় বিশেষভাবে উপযোগী।
২. উচ্চ শক্তি ও স্থায়িত্ব
- কাঠের তুলনায় বেশি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী।
- সহজে বাঁকায় না, ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনে বিকৃত হয় না।
৩. অগ্নি প্রতিরোধ ক্ষমতা
- অ্যালুমিনিয়াম কাঠের তুলনায় অধিক অগ্নি প্রতিরোধী, যা ভবনের নিরাপত্তা বাড়ায়।
৪. পচন ও কীটনাশক প্রতিরোধ
- ঘুণপোকা ধরে না এবং পানির সংস্পর্শে পচে যায় না।
- আর্দ্র বা উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
৫. কম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়
- পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ; দীর্ঘ সময় ব্যবহারযোগ্য।
- রঙ বা পালিশের প্রয়োজন হয় না, শুধু নিয়মিত পরিষ্কার রাখলেই যথেষ্ট।
৬. আলো প্রবেশের সুবিধা
- অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম সরু হওয়ায় কাঁচের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে প্রাকৃতিক আলো অধিক প্রবেশ করে।
৭. সহজ উৎপাদন ও ইনস্টলেশন
- তৈরি মাপে সহজলভ্য, তাই দ্রুত ইনস্টল করা যায়।
- তুলনামূলকভাবে কম দক্ষ কারিগর দ্বারা স্থাপন সম্ভব, ফলে শ্রম খরচ কম।
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
ইমারতের দরজা-জানালা বিষয়ক প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. দরজা কাকে বলে?
কক্ষে যাতায়াত, আসবাবপত্র বা মালপত্র আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে সুনিয়ন্ত্রিত খোলা ও বন্ধ করার ব্যবস্থা সহ যে ফাঁকা অংশ থাকে তাকে দরজা বলে।
২. জানালা কাকে বলে?
কক্ষে প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস প্রবেশ এবং বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য খোলা ও বন্ধ করার ব্যবস্থা সহ যে ফাঁকা অংশ থাকে তাকে জানালা বলে।
৩. কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী দরজা কত প্রকার ও কী কী?
কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী দরজা ৫ প্রকার—
১) রিভলভিং ডোর
২) স্লাইডিং ডোর
৩) সুইং ডোর
৪) কলাপসিবল স্টিল ডোর
৫) রোলিং স্টিল শাটার ডোর
৪. ক্রস ভেন্টিলেশন কাকে বলে?
কক্ষের বিপরীত দিকের দেয়ালে জানালা বা খোলা জায়গা রাখার মাধ্যমে বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করাকে ক্রস ভেন্টিলেশন বলে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. আবাসিক বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দরজার মাপসমূহ লেখ।
ব্যবহার | প্রস্থ | উচ্চতা |
প্রধান প্রবেশ দ্বার | ৩’-৬”, ৫’-০”, (দুই পাল্লা হলে ৫’-৬”) | ৭’-০” |
শয়ন/লিভিং/ফ্যামিলি রুম | ৩’-৪” বা ৩’-৬” | ৭’-০” |
লিভিং ও ডাইনিং রুমের মাঝের দরজা | ৪’-২” থেকে ৭’-৬” | ৭’-০” |
স্টাডি রুম | ৩’-০”, ৩’-৪” | ৭’-০” |
রান্নাঘর | ২’-৬”, ৩’-০” | ৭’-০” |
টয়লেট/বাথ | ২’-১”, ২’-৬” | ৭’-০” |
গ্যারেজ | ৭’-১১”, ১০’-০” | ৭’-০” |
২. বিভিন্ন কক্ষ অনুযায়ী দরজা–জানালার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা।
- বেডরুম: পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের জন্য বিপরীত দেয়ালে জানালা, প্রাইভেসি বজায় রাখার উপযোগী দরজা।
- লিভিং রুম: প্রধান প্রবেশপথের সাথে সরাসরি সংযুক্ত না হয়ে পাশে বা আড়ালে থাকা দরজা।
- রান্নাঘর: জানালা এমনভাবে স্থাপন যাতে রান্নার ধোঁয়া সহজে বের হয় এবং দক্ষিণমুখী না হয়।
- বাথরুম/টয়লেট: ছোট আকারের জানালা গ্যাস ও দুর্গন্ধ বের করার জন্য অপরিহার্য।
- গ্যারেজ: বড় আকারের দরজা যানবাহন সহজে প্রবেশ ও বের করার উপযোগী।
৩. অ্যালুমিনিয়ামের দরজা–জানালার প্রয়োজনীয়তা।
- স্থান সাশ্রয়ী স্লাইডিং সিস্টেম
- কাঠের তুলনায় অধিক স্থায়িত্ব ও শক্তি
- অগ্নি প্রতিরোধী ও ঘুণপোকা প্রতিরোধী
- আবহাওয়ায় বিকৃতি ঘটে না
- রক্ষণাবেক্ষণ সহজ ও ব্যয় কম
- আলো প্রবেশের সুযোগ বেশি
- দ্রুত ইনস্টলেশন ও কম দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন
৪. জানালার আকার নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয়।
- রুমের আকার ও ব্যবহার
- সূর্যের আলো ও বাতাসের দিক
- প্রাইভেসি ও আসবাবের অবস্থান
- ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা (ক্রস ভেন্টিলেশন)
- বাহ্যিক দৃশ্য ও পরিবেশ
- সিল লেভেলের উচ্চতা
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
১. কক্ষে দরজার অবস্থান ও বিবেচ্য বিষয়।
- দরজা দেয়াল ঘেঁষে স্থাপন করে কার্যকর জায়গা বৃদ্ধি করা
- দরজার সংখ্যা কম রাখা
- আসবাবের অবস্থান বিবেচনা করে দরজা বসানো
- প্রধান প্রবেশদ্বার থেকে সরাসরি কক্ষ দেখা না যায় এমনভাবে স্থাপন
- রান্নাঘরের দরজা আড়ালে রাখা
- বাথরুমের দরজা মাঝ বরাবর রেখে সঠিক বিন্যাস তৈরি
- বারান্দার দরজা বাইরে দিকে খোলা রাখা
২. কক্ষে জানালার অবস্থান ও বিবেচ্য বিষয়।
- সূর্যের আলো ও বাতাসের দিক বিবেচনা
- রুমের ১/৩ অংশ জানালা রাখা
- বহুতল ভবনে সিল লেভেল কমিয়ে ১২”-২৪” রাখা
- বিপরীত দেয়ালে জানালা রেখে ক্রস ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা
- রান্নাঘরের জানালা দক্ষিণ দিকে না রাখা
- বাহ্যিক দৃশ্য সুন্দর হয় এমনভাবে জানালা স্থাপন
৩. কক্ষে দরজা–জানালার মাপ নির্ণয়ে বিবেচ্য বিষয়।
- রুমের আকার ও ব্যবহার
- যাতায়াত ও মালপত্র আনা-নেওয়ার সুবিধা
- প্রাইভেসি ও আসবাবের বিন্যাস
- পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ
- স্থাপত্য নকশা ও নান্দনিকতা
- সুরক্ষা ও নিরাপত্তা
৪. কাঠ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের দরজা–জানালার সুবিধা–অসুবিধা।
উপাদান | সুবিধা | অসুবিধা |
কাঠ | নান্দনিক, প্রাকৃতিক, সহজে মেরামতযোগ্য | ঘুণপোকা ধরে, আর্দ্রতায় ফুলে যায়, কম অগ্নি প্রতিরোধী |
স্টিল | মজবুত, সুরক্ষিত, দীর্ঘস্থায়ী | মরিচা পড়ে, ভারী, তাপ পরিবাহী |
অ্যালুমিনিয়াম | হালকা, মরিচা পড়ে না, অগ্নি প্রতিরোধী, রক্ষণাবেক্ষণ সহজ | দাম বেশি, ডেন্ট পড়লে মেরামত কঠিন |