কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ

কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” এর “কিস্তোয়ার জরিপের প্রাথমিক ধারণা এর ব্যবহারিক” পাঠ এর অংশ।

Table of Contents

কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ

 

মূলত, কিস্তোয়ার জরিপ সেটেলমেন্ট জরিপের দ্বিতীয় ধাপ। সেটেলমেন্ট জরিপ দু’ধাপে সম্পাদিত হয়। এর প্রথম ধাপ ঘের জরিপ এবং ঘের জরিপে তৈরি স্কেলিটন ম্যাপ বা কাঠামো নকশা বা পি-70 শিটেই দ্বিতীয় ধাপে কিস্তোয়ার জরিপ নকশা তৈরি হয়। তাই কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে ঘের জরিপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

 

ঘের জরিপ :

ট্র্যাভার্স বা ঘের স্টেশন দিয়ে অতিক্রমকারী নির্দিষ্ট দিক ও দৈর্ঘ্যমানের ধারাবাহিক সরল রেখা দ্বারা সৃষ্ট কাঠামোকে ঘের বা ট্র্যাভার্স বলা হয়। ঘেরের প্রত্যেকটি সরল রেখাকে ঘের বাহু বলা হয়। ঘেরের বাহুগুলোর দিক ও মান নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে ঘের জরিপ বলা হয়। সাধারণত কোণ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে বাহুগুলোর দিক এবং দৈর্ঘ্য পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যমান নির্ণয় করা হয়। ঘের খোলা ও বদ্ধ— এ দু’ধরনের হতে পারে। কম্পাস, প্লেন টেবিল বা থিওডোলাইটের সাহায্যে ঘের দেয়া যায়। সেটেলমেন্ট জরিপের ক্ষেত্রে সাধারণত থিওডোলাইটের সাহায্যে তিন ধাপে বদ্ধঘের দিয়ে কিস্তোয়ার জরিপ তাত্ত্বিক করা হয়। ঘেরের ধাপগুলো হলো- (ক) প্রধান ঘের (খ) উপঘের ও (গ) মৌজা বা গ্রাম ঘের ।

 

কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ

 

কিস্তোয়ার জরিপে ট্রাভার্সিং-এর আবশ্যকতা :

যেহেতু কিস্তোয়ার জরিপকারী (আমিন) মূল কাঠামো নকশায় (পি-70 শিটে) অঙ্কিত বিভিন্ন স্মারক বিন্দুর উপর ভিত্তি করে মূল কাঠামো এলাকার বিস্তারিত কিস্তোয়ার নকশা অঙ্কন করেন। তাই প্রতিটি মৌজা বা গ্রাম বা জরিপ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক (খোলামেলা সমতল এলাকায় প্রতি বর্গমাইলে 20টি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রতি বর্গমাইলে ন্যূনতম 30টি) স্মারক বিন্দু দিয়ে নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে মূল কাঠামোর নকশা অঙ্কনের উদ্দেশ্যেই ট্র্যাভাসিং বা ঘের জরিপ করা হয়। মূল কাঠামো নকশা (ঘের জরিপের নকশা) বৃহত্তর ঘের হতে ক্রমান্বয়ে ছোট ঘেরের পরিমাপ নেয়ার মাধ্যমে করা হয়, বিধায় নকশায়নে ভুলের পরিমাণ হ্রাস পায় । ঘের নকশা ও কিস্তোয়ার নকশা সাধারণত একই স্কেলে করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত 16 = 1 মাইল (সাদৃশ্য ভগ্নাংশ = 4000 ) স্কেলে করা হয়ে থাকে।

 

কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ

 

থিওডোলাইট ঘেরের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম :

(ক) থিওডোলাইট (পায়াসহ)  

(খ) গান্টার্স শিকল  

(গ) ইনভার বা স্টিলের ফিতা (300 ফুট বা 100 মিটার লম্বা)  

(ঘ) সার্ভেয়ারের কাঁটা কম্পাস 

(ঙ) 4 বা 6 লম্বা ডায়াগোনাল স্কেল (পিতলের প্রয়োজনীয় সংখ্যক)

(চ) রেঞ্জিং রড বা পংক্তি দণ্ড, ঝাণ্ডি, পতাকা, বাঁশের খুঁটি, দা, কুঠার, শাবল ইত্যাদি 

(ছ) ড্রয়িং শিট, কাগজ, কলম, পেন্সিল, রবার, নির্ধারিত ফর্ম ইত্যাদি প্রয়োজনমতো

(জ) ফিল্ড বুক

(ঝ) সার্ভে ছাতাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী 

 

প্রধান ঘের :

ঘের জরিপের প্রথম পর্যায়ে উপজেলা বা থানার আওতাভুক্ত গ্রামগুলোর বাইরের সীমানা বরাবর 2.5 গান্টার শিকল হতে 3 গান্টার শিকল পর পর এবং কোনায় কোনায় শক্ত বাঁশের খুঁটি পুঁতে স্টেশন চিহ্নিত করা হয় এবং স্টেশনগুলোর মাঝে আন্তঃদৃষ্টিগোচরতার জন্য বাধাবিপত্তি, ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে নেয়া হয়। প্রত্যেক স্টেশনে মিলিত বাহুগুলোর অন্তঃস্থ কোণ বা বহিস্থ কোণ বা প্রয়োজনে উভয় কোণই থিওডোলাইটের সাহায্যে সূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত কোণ মাপার জন্য । সেকেন্ড থিওডোলাইট এবং বাহুর দৈর্ঘ্য মাপার জন্য ইনভার টেপ বা স্টিল টেপ ব্যবহার করা হয়।

উপজেলা বা থানার এ প্রাথমিক ঘেরকে প্রধান ঘের বলা হয়। সাধারণত এর ক্ষেত্রফল 200 বর্গমাইল হতে 250 বর্গমাইল হয়ে থাকে। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো প্রধান ঘেরের ক্ষেত্রফল 100 বর্গমাইলের কমও হতে পারে, আবার বৃহৎ উপজেলাকে দু’টি প্রধান ঘেরেও বিভক্ত করতে হতে পারে। যদি কোনো উপজেলার সীমানা বরাবর কোনো কারণে ঘের দেয়া সম্ভব না হয় তবে ঘেরের বাহু হতে অফসেট নিয়ে সীমানা রেখা নির্ধারণ করতে হয়। এক্ষেত্রে স্মরণীয় যে, কোনো ক্ষেত্রেই যেন কোনো ঘের বা উপঘের একাধিক উপজেলায় না পড়ে।

 

নির্ণয় করতে হয় এবং গলের ট্র্যাভার্স টেবিল অনুযায়ী প্রত্যেকটি বাহুর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয় করে মিলন ভ্রান্তির সংশোধনী এয়োগের পর স্বতন্ত্র স্থানাডের মান অনুযায়ী ট্র্যাভার্সটি নির্দিষ্ট স্কেলে (16 = 1 মাইল) ড্রয়িং শিটে অঙ্কন করে ঘের কাঠামো নকশা তৈরি করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা হয়।

 

উপঘের :

প্রধান ঘের দেয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে জরিপ কাজের নির্ভুলতা ও সুবিধার জন্য প্রধান ঘেরের আওতাধীন এলাকাকে পড়ে 20 বর্গমাইল এলাকাবিশিষ্ট ঘেরে বিভক্ত করে এর আওতাধীন গ্রামগুলোর বাইরের সীমানায় বা সীমানার কাছাকাছি স্টেশন চিহ্নিত করে স্টেশনগুলোতে শক্ত বাঁশের খুঁটি বসিয়ে এগুলোর মাঝে আন্তঃদৃষ্টিগোচরতার জন্য বাধাবিপত্তি, ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে নেয়া হয়। এ অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকার ঘেরকে উপঘের বলা হয়। উপঘেরের বাহুগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যেন ছোট ছোট অফসেট (1 গান্টার শিকলের কম) নিয়ে এলাকার সীমানা রেখা নির্ধারণ করা যায়।

উপঘের দেয়ার সময় নির্ভুলতার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হয়। এতে সাধারণত 10 সেকেন্ড হতে 20 সেকেন্ড থিওডোলাইট ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং দক্ষ জরিপকরের সাহায্যে নির্ভুলভাবে ঘের দেয়া হয়। এতেও প্রধান ঘেরের মতো জ্যোতিষীয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত উত্তর রেখা নির্ধারণ করে ঘেরের বাহুগুলোর প্রকৃত বিয়ারিং বা অ্যাজিমাথ হিসাব করে বের করা হয় এবং গলের ট্র্যাভার্স টেবিলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বসিয়ে বাহুগুলোর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয় করে মিলন ভ্রান্তির জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পর স্বতন্ত্র স্থানাঙ্ক অনুযায়ী ঘের কাঠামোটি নকশায়িত করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা হয়।

 

মৌজা বা গ্রাম ঘের :

মৌজা বা গ্রাম ঘের দিয়ে স্কেলিটন ম্যাপ বা পি-70 শিট তৈরি করাই ট্র্যাভার্সিং দলের শেষ কাজ। এক্ষেত্রে উপঘেরের আওতাধীন প্রত্যেকটি গ্রাম বা মৌজার বাইরের সীমানা বরাবর বা ক্ষেত্রবিশেষে সীমানার কাছাকাছি স্টেশন চিহ্নিত করে শক্ত বাঁশের খুঁটি দিয়ে গ্রাম বা মৌজাকে বেষ্টন করে ঘের দেয়া হয়— এ ঘেরকে মৌজা বা গ্রাম ঘের বলা হয়। মৌজার আকার- আকৃতির ধরন অনুযায়ী ঘের কাঠামোর আকার-আকৃতি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কোনো মৌজার অংশবিশেষ সরু হয়ে পার্শ্ববর্তী মৌজার ভিতরে প্রবেশ করে থাকলে যদি ঘেরের বাহু হতে ছোট ছোট অফসেট (এক গান্টার শিকলের কম) নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা না যায়, তবে ঐ অংশে ত্রিভুজাকারের ঘের দিয়ে ছোট ছোট অফসেট নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।

এ ছাড়াও ঘের জরিপের পর কিস্তোয়ার জরিপের কাজ নির্ভুল ও সহজতর করার সুবিধার্থে মৌজায় উপঘের দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো অনুসরণ করা উচিত : ১। সমতল বাধামুক্ত স্থানে উপঘেরের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য 40 গান্টার শিকলের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।

২। মৌজাস্থ পাহাড়ের পাদদেশের সমতল ভূমিকে বেষ্টন করে উপঘের দিতে হবে। যদি পাদদেশ জঙ্গলাকীর্ণ হয় তবে উপ-

ঘেরের সীমানা বাহু জঙ্গলের বাইরের ধার ঘেঁষে নির্ধারণ করতে হবে। ৩। গভীর প্রশস্ত নদীর উভয় পাড়ে উপঘের দিতে হবে।

৪। প্রশস্ত নদী হেঁটে পারাপারযোগ্য অংশের ক্ষেত্রে এক পাড়ে উপঘের দিলে চলবে। ৫। ছোট ছোট বসতি এলাকার সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ এলাকা বা বৃহৎ বসতি এলাকার ক্ষেত্রে একে পরিবেষ্টন করে এবং ভিতরে

উপঘের দিতে হবে । ৬। জরিপের আওতাভুক্ত এলাকায় অনাবাদী জমির মধ্যে 50 একর আবাদি জমি থাকলে আবাদি জমিকে পৃথক উপঘেরে – রাখতে হবে এবং আবাদি জমির পরিমাণ 50 একরের কম আবাদি জমি এলাকায় বা তার নিকটে দু’টির অধিক উপঘের স্টেশন থাকতে হবে।

৭। ঘন বন বা বৃহৎ বিলকে বেষ্টন করে উপঘের দিতে হবে। ঘেরের স্টেশনগুলো নির্ধারণের পর ফিতা বা শিকলের সাহায্যে বাহুর দৈর্ঘ্য, থিওডোলাইটের সাহায্যে কোণ পরিমাপ ও বিয়ারিং মেপে গলের ট্র্যাভার্স টেবিলে সারণিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ ঘেরের বাহুগুলোর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয় করে স্থানাঙ্ক অনুযায়ী 16 = 1 মাইল স্কেলে (প্রয়োজনে 32 = 1 মাইল বা 64´ = 1 মাইল স্কেলে) মৌজা ঘের নকশায়িত করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে স্মরণীয় যে, প্রত্যেকটি মৌজার নকশা পৃথক পৃথক শিটে আঁকতে হবে। এ নিয়মে নকশায়িত মৌজার কঙ্কাল নকশা বিস্তারিত কিস্তোয়ার জরিপে ব্যবহৃত হয়। এ নকশাটিকে পি-70 শিট বলা হয় এবং এটা কিস্তোয়ার জরিপের আমিনকে দেয়া হয়। কিস্তোয়ার আমিন এ মূল ঘের নকশাটির অনুলিপি তৈরি করে মাঠে ব্যবহার করেন। এ নকশার অনুলিপি খাকা নামে পরিচিত ।

ঘের জরিপকালে করণীয় বিষয়সমূহ :

স্টেশনচিহ্নিতকরণ :

সাধারণত ঘেরের ধাপ অনুযায়ী প্রধান ঘের স্টেশনের চতুর্দিকে 5টি বর্গাকার গর্ত করে (চিত্র ক), উপঘের স্টেশনে স্টেশনের চতুষ্পার্শে 4টি বর্গাকার গর্ত করে (চিত্র খ), মৌজা বা গ্রাম ঘেরের স্টেশনে স্টেশনের চতুষ্পার্শে 3টি বর্গাকার গর্ত করে (চিত্র গ) এবং মৌজার উপঘের স্টেশনে স্টেশনের দুই বিপরীত পাশে দু’টি বর্গাকার গর্ত করে (চিত্র ঘ) স্টেশন চিহ্নিত করা হয়। বর্গাকার গর্তগুলোর আকার 60 সেমি × 60 সেমি × 60 সেমি হয়ে থাকে। গর্তের খননকৃত মাটি বৃত্তাকার স্টেশনের উপর দিতে হবে।

 

বাহুর দৈর্ঘ্য পরিমাপকরণ :

আদর্শায়িত প্রমাণ দৈর্ঘ্যের দু’টি শিকলে দু’বার মাপ নিয়ে গড় মাপ গ্রহণ করতে হয়। যদি পরিমাপে প্রতি 5 গান্টার শিকল দৈর্ঘ্যের জন্য 1 কড়ির (Link) অধিক পার্থক্য হয় তবে পুনরায় মাপ নিতে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, প্রধান ঘের ও উপঘেরের বাহুর দৈর্ঘ্য পরিমাপকালে সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের ফিতা বা শিকলের সাহায্যে মাপ গ্রহণ করে গান্টার শিকলের মাপে রূপান্তর করে জরিপলিপিতে লাল কালিতে লেখাই উত্তম ।

 

কোণ পরিমাপকরণ :

যে-কোনো স্টেশন হতে কোণ পরিমাপের কাজ করা যেতে পারে। তবে ত্রিসীমানার স্টেশনকে মূল স্টেশন ও প্রারম্ভিক স্টেশন ধরে কোণ পরিমাপের কাজ আরম্ভ করাই উত্তম। সচরাচর থিওডোলাইটের বামাবর্তে ঘের দেয়া হয়, তাই স্টেশনে থিওডোলাইট বসিয়ে অস্থায়ী সমন্বয়ের পর বামাবর্তে অন্তঃস্থ কোণের মাপ নিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষ বহিস্থ কোণ বা উভয় কোণেরই পরিমাপ নেয়া যেতে পারে। প্রত্যেকটি কোণ থিওডোলাইট বামমুখী অবস্থায় কমপক্ষে তিনবার এবং ডানমুখী অবস্থায় তিনবার মেপে (পুনরাবৃত্তি পদ্ধতিতে) গড় মান গ্রহণ করতে হয়। এ মান জরিপলিপিতে লেখতে হয়।

 

বিয়ারিং পরিমাপকরণ :

এ ঘের জরিপ নকশা কিস্তোয়ার জরিপের কাজে ব্যবহৃত হয়, বিধায় এ ঘের বাহুগুলোর স্থায়ী অবস্থান চিহ্নিত করতে হয় । তাই জ্যোতিষীয় জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত উত্তর রেখা নির্ধারণ করে বাহুগুলোর প্রকৃত বিয়ারিং বা অ্যাজিমাথ নির্ণয় করা হয়। প্রকৃত মধ্যরেখা হতে কোনো রেখা পর্যন্ত ডানাবর্তের অনুভূমিকের কোণকে প্রকৃত বিয়ারিং বা অ্যাজিমাথ বলা হয়।

সাধারণত প্রধান ঘের ও উপঘেরের 20 হতে 30 স্টেশন পর পর বা 6 হতে ৪ কিলোমিটার পর উভয়ের সংযোগ বিন্দুতে অ্যাজিমাথ মাপতে হয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত উত্তর রেখার পূর্ব পাশে একটি এবং পশ্চিম পাশে একটি অথবা একই পাশে দু’টি তারা পর্যবেক্ষণ করে অ্যাজিমাথ নির্ণয় করা হয়। সূর্য বা ধ্রুব তারার ‘ইলংগেশনে’ অ্যাজিমাথ নেয়ার সময় জরিপলিপিতে তারা (Star) দেখার স্টেশনে বড় নিশান এবং যে স্টেশনকে দেখা হবে ঐ স্টেশনে ছোট নিশান এঁকে দিতে হবে। তা ছাড়াও পশ্চাৎ ও অগ্রবর্তী রেখার মধ্যবর্তী স্থানে লিখে দিতে হবে এবং অবস্থান অনুযায়ী পার্শ্ব গ্রামগুলোর নাম উল্লেখ করতে হবে।

 

জরিপলিপি (Field Book) :

ট্র্যাভার্স জরিপের জরিপলিপিতে বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যমান, বিয়ারিং অফসেট, ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে শিকল জরিপের অনুরূপ জরিপলিপি ব্যবহৃত হয়। কোণের মান, পরতাল রেখা সংক্রান্ত তথ্যাদির জন্য ও জ্যোতিষীয় পর্যবেক্ষণের তথ্যাদি উল্লেখ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন জরিপলিপি ব্যবহৃত হয়। জি.টি.এস. স্টেশনের সাথে সম্পর্কিতকরণ : সরকারি জরিপ সংস্থা কর্তৃক প্রণীত জি.টি.এস. জরিপ নকশায় উদ্ধৃত জি.টি.এস. স্টেশনের সাথে সরজমিনে ঘের বা উপঘেরের তিন বা ততোধিক স্টেশনের সংযোগ দিতে পারলে ঘেরের নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রয়োজনে চান্দা স্টেশন সাথে বা পৃথক ঘের তৈরি করে এ কাজ করা যেতে পারে। (চান্দা দু ঘের স্টেশনের মাঝে দূরত্বের পরিমাপকালে মুরব্বা গঠনের সুবিধার্থে যে সাব- স্টেশন স্থাপন করা হয়।)

ট্র্যাভার্স হিসাবকরণ ঃ

জরিপকালে প্রাপ্ত তথ্যাদি গলের ট্র্যাভার্স টেবিলে বসিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ প্রত্যেকটি স্টেশনের স্বতন্ত্র স্থানাঙ্ক নির্ণয় করতে হয়। 

ড্রয়িং শিটে ঘের অঙ্কন ঃ

প্রারম্ভিক স্টেশনকে মূল স্টেশন ধরে টেবিলে প্রাপ্ত স্থানাঙ্ক অনুযায়ী ঘেরটি অঙ্কন করতে হয়। মৌজা ঘেরের নকশা 16 = 1 মাইল স্কেলে আঁকতে হয়। এক একটি মৌজা এক একটি শিটে আঁকতে হয়। মৌজার আকার ছোট বা বড় হওয়ার ফলে এর ব্যতিক্রম হয় না।

 

খসড়া নকশায় কালি দিতে হয় :

নিম্নের নিয়মে খসড়া নকশায় কালি দিতে হয় :

 

প্রধান ঘের : 

রেখাগুলো অবিচ্ছিন্ন, লাল কালিতে। চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে।

 

উপঘের :

রেখাগুলো অবিচ্ছিন্ন, লাল কালিতে। চান্দা ও চান্দার নাম নীল কালিতে।

 

পরতাল :

রেখাগুলো হলুদ কালিতে ।

চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে ।

 

মৌজা ঘের :

রেখাগুলো অবিচ্ছিন্ন, কালো কালিতে। চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে ।

মৌজা উপঘের ঃ রেখাগুলো ছিন্ন, কালো কালিতে । চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে। আপত্তি এলাকা ঃ সীমানা রেখা নীল কালিতে।

চান্দা ও চান্দার নাম নীল কালিতে।

 

কিস্তোয়ার জরিপ :

ট্র্যাভার্স জরিপের দল পি-70 শিট তৈরি করার পর বেশ কিছুদিন অতিক্রান্তের পর সেটেলমেন্ট জরিপের দ্বিতীয় ধাপ কিস্তোয়ার জরিপের কাজ আরম্ভ করা হয়। এ জরিপে প্রতিদলে 1 জন কানুনগো, 3জন সার্ভেয়ার, 4জন বদর আমিন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেইনম্যান ও সাহায্যকারী থাকে। এ জরিপে ঘের কাঠামো নকশায় (মৌজা ঘের নকশায়) মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমিগুলো প্লটে প্লটে মেপে বিস্তারিত নকশা তৈরি করা হয় এবং জমির শ্রেণি, পরিমাণ, মালিকানা ও খাজনা নির্ধারণ করা হয়। এতে কানুনগো ও আমিনই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা পি-70 শিট হতে থাকা তৈরি করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কিস্তোয়ার জরিপ আরম্ভ করেন।

 রেখাগুলো অবিচ্ছিন্ন, লাল কালিতে। চান্দা ও চান্দার নাম নীল কালিতে।

 

পরতাল :

রেখাগুলো হলুদ কালিতে ।

চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে ।

 

মৌজা ঘের :

রেখাগুলো অবিচ্ছিন্ন, কালো কালিতে। চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে ।

 

মৌজা উপঘের :

রেখাগুলো ছিন্ন, কালো কালিতে । চান্দা ও চান্দার নাম কালো কালিতে।

 

আপত্তি এলাকা :

সীমানা রেখা নীল কালিতে।

চান্দা ও চান্দার নাম নীল কালিতে।

 

কিস্তোয়ার জরিপ :

ট্র্যাভার্স জরিপের দল পি-70 শিট তৈরি করার পর বেশ কিছুদিন অতিক্রান্তের পর সেটেলমেন্ট জরিপের দ্বিতীয় ধাপ কিস্তোয়ার জরিপের কাজ আরম্ভ করা হয়। এ জরিপে প্রতিদলে 1 জন কানুনগো, 3জন সার্ভেয়ার, 4জন বদর আমিন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেইনম্যান ও সাহায্যকারী থাকে। এ জরিপে ঘের কাঠামো নকশায় (মৌজা ঘের নকশায়) মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমিগুলো প্লটে প্লটে মেপে বিস্তারিত নকশা তৈরি করা হয় এবং জমির শ্রেণি, পরিমাণ, মালিকানা ও খাজনা নির্ধারণ করা হয়। এতে কানুনগো ও আমিনই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা পি-70 শিট হতে থাকা তৈরি করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কিস্তোয়ার জরিপ আরম্ভ করেন।

 

কিস্তোয়ার জরিপের ধাপসমূহ :

১। থাকা তৈরিকরণ ।

২। হারানো স্টেশন চিহ্নিতকরণ।

৩। মৌজাকে মোরব্বায় বিভক্তকরণ, মোরব্বা স্টেশন চিহ্নিতকরণ ও কাটান কাটা ।

8। দাহী বণ্টন ।

৫। মৌজার সীমানা অঙ্কন।

৬। মৌজার দাগগুলো (প্লট) নকশায় উঠানো ।

৭।পরতালের ফিল্ড বুক তৈরিকরণ । 

৮।পার্শ্ববর্তী মৌজার সাথে সীমানা মিলকরণ।

৯। নকশায় কালি দেয়া ও আলামত অঙ্কন করে নকশা তৈরিকরণ। 

১০। খানাপুরি বা প্রাথমিক স্বত্ব লিখন (খতিয়ান ও খসড়াসহ)

১১। নকশায় দাগ নম্বর বসানো।

১২। ক্ষেত্রফল নিরূপণ । ১৩। মাঠ বুঝারত ।

১৪। তসদিকের কাজ ।

১৫। খসড়া প্রকাশনা ও আপত্তি কেস গ্রহণ ।

১৬। আপত্তি কেস শুনানি ।

১৭। জাবেদা নকল প্রদান

১৮। আপিল কেস গ্রহণ ও শুনানি।

১৯। চূড়ান্ত বিশুদ্ধতা যাচাই । 

 

উপরোক্ত ধাপগুলির মধ্যে ২ হতে ৮ এবং ১৩ ক্রমিক নম্বরের কাজগুলো সরাসরি সরজমিনে সম্পাদিত হয়। তাই এ ধাপগুলোকে মাঠের কাজ বা সরজমিনের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাদবাকি ধাপগুলোকে দাপ্তরিক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ক্রমিক নং ১ হতে ৯ সরাসরি জরিপের সাথে সম্পর্কিত, তাই এগুলোকে জরিপ সম্পর্কিত কাজ এবং ক্রমিক নং ১০ হতে ২০ পর্যন্ত ধাপগুলো রেকর্ড তৈরির সাথে সম্পর্কিত বিধায় এগুলোকে রেকর্ড সংক্রান্ত কাজ বলা হয় । • কিস্তোয়ার জরিপ প্রক্রিয়া (Procedure of cadastral survey) :

কোনো মৌজার কিস্তোয়ার জরিপের জন্য প্রথমেই ট্র্যাভার্স পার্টির করা মৌজার ঘের নকশা (P-70 Sheet) সংগ্রহ করে নিতে হয়। মৌজার ঘের নকশা পাওয়া না গেলে প্লেন টেবিল, কম্পাস বা থিওডোলাইটের সাহায্যে মৌজার ঘের নকশা (25 সেমি = 1 কিমি বা 50 সেমি = 1 কিমি বা 100 সেমি = 1 কিমি বা 16 ইঞ্চি = 1 মাইল বা 32 ইঞ্চি = 1 মাইল বা 64 ইঞ্চি = 1 মাইল স্কেলে) তৈরি করে নেয়া যেতে পারে। এর পর নিম্নোক্ত ধাপসমূহ অনুসরণ করে কিস্তোয়ার জরিপ করা হয় ।

(ক) থাকা তৈরিকরণ ঃ কিস্তোয়ারের কাজে মৌজাকে মুরব্বায় বিভক্তকরণ ও কাটান কাটার জন্য মাঠে ঘের কাঠামো নকশা ব্যবহার করতে হয়। ফলে ঘের কাঠামো নকশা (Skeleton map বা P-70 Sheet) মাঠে ব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বিধায় ট্রেসিং করে এর অনুলিপি অর্থাৎ খাকা তৈরি করে নিতে হয়। (খ) হারানো স্টেশন চিহ্নিতকরণ : সাধারণত ঘের জরিপ সমাপ্তির বেশ কিছুদিন পর কিস্তোয়ার জরিপ করা হয়ে থাকে।

প্লেন টেবিল জরিপের উদ্দেশ্য ও আওতা
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ফলে কিস্তোয়ার জরিপের সুবিধার্থে কিস্তোয়ার জরিপের আমিনকে অনুসন্ধান করে ঘের স্টেশনগুলো বের করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে আমিনকে খাকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঘের ও উপঘের স্টেশন খুঁজে বের করে নিতে হয়। (স্টেশন খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া অনুচ্ছেদ

১৯.২-এ উদ্ধৃত করা হয়েছে (গ) মৌজাকে মুরব্বায় বিভক্তকরণ, মুরব্বা স্টেশন চিহ্নিতকরণ ও কাটান কাটা ঃ মৌজার ভিতরের ঘনবসতি, ঘন বন বা বিশেষ এলাকাকে উপঘের দেয়ার পর বাদবাকি এলাকাকে মুরব্বায় (চতুর্ভুজে) ভাগ করে নিতে হয়। ঘের বা উপঘের রেখার উপর জরিপকরের জরিপ কাজের সুবিধামতো 10 শিকল হতে 14 শিকল পর পর মুরব্বা স্টেশন চিহ্নিত করে নিতে হয়, যেন মুরব্বা রেখাগুলো জমির অধিকাংশ আইলের সাথে সমান্তরাল হয়। মৌজার সরু অংশ মুরব্বার উপযোগী না হলে ত্রিভুজ করেও সরু অংশের জরিপ কাজ করা যেতে পারে। মৌজা ঘের বা উপঘের স্টেশনগুলো মুরব্বা স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মৌজাকে মুরব্বায় বিভক্তকরণ কালে মৌজা ঘের রেখার উপর যে স্টেশনগুলো নির্বাচন করা হয়। সেগুলোকে মুরব্বা স্টেশন বলা হয়। মৌজাকে মুরব্বায় বিভক্তকরণের পূর্বে ঘের বা উপঘের রেখায় পায়ে হেটে সুবিধাজনক ও জরিপ কাজের জন্য সর্বাধিক উপযোগী স্টেশন নির্বাচন করতে হয়। মুরব্বা স্টেশন অবশ্যই জমির আইলের উপর করতে হবে, কোনোক্রমেই আবাদি জমিতে করা যাবে না। মুরব্বা রেখা আইলের যে বিন্দুতে ছেদ করে তা খাকায় চিহ্নিত করতে হবে এবং সরজমিনে আইলে 2-3 ফুট চওড়া দাগ কেটে চিহ্নিত করতে হবে— একে কাটান কাটা বলা হয়। খাকায় মৌজাকে মুরব্বায় বিভক্তকরণের পর থাকাখানা কানুনগোর নিকট পেশ করতে হবে।

তিনি খাকায় মুরব্বার গঠন, পরিমাপ ইত্যাদি নিরীক্ষান্তে মুরব্বা ও কাটানগুলো মূল নকশায় উঠাবেন। খাকায় মুরব্বা নিরীক্ষাকালে মাপের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে (সমতল ভূমিতে সর্বাধিক পার্থক্য 0.5 লিংক প্রতি গান্টার শিকলে এবং বন্ধুর ভূমিতে 1.00 লিংক প্রতি গান্টার শিকলে) হলে তা বণ্টন করে দিতে হবে এবং মাপের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য সীমানার অধিক হলে পুনরায় মাপ নিতে হবে।

 

দাহা বণ্টন :

নকশায় অঙ্কিত দু’ স্টেশনের মাঝের গ্রহণযোগ্য গরমিল জরিপ শিটে বিভাজন বা বণ্টন করে দিতে হয়। এ গরমিল বণ্টন না করে নকশা অঙ্কন করলে নকশার একাংশে বেশি ভুল পরিলক্ষিত হবে। দাহী বণ্টন এই ভুল বণ্টনের একটি উত্তম নিয়ম। সাধারণত নকশায় একই স্টেশন যেতে • কাটানগুলো প্লট করলে স্টেশনটিতে বড় ছিদ্র হয়ে যায় এবং ডিভাইজারের কাটা বেশি ফাঁক করতে হয়। দাহীতে এ ভুল বণ্টন হতে করলে উক্ত অসুবিধাগুলোর হাত হতে রক্ষা পাওয়া যায়। ভুল বণ্টনের ক্ষেত্রে (১) ধরা যাক দু’স্টেশনের দূরত্ব 32.50 শিকল এবং গরমিলের পরিমাণ 15 লিংক।

এক্ষেত্রে 10 এর গুণিতক 30 শিকলকে 10 শিকলের সমান 3 ভাগে এবং 15 লিংকে 3 ভাগ করে, অর্থাৎ প্রতি 10 শিকলে 5 লিংক গরমিল সমন্বয় করে নকশা অঙ্কন করতে হবে। (২) ধরা যাক, দু’স্টেশনের মধ্যবর্তী দূরত্ব 37.50- শিকল এবং গরমিলের পরিমাণ 16 লিংক। এক্ষেত্রে 40 শিকলকে 10 শিকল করে সমান 4 ভাগে ভাগ করে গরমিলকে সমান 4 ভাগ অর্থাৎ প্রতি 10 শিকলে 4 লিংক ভুল সমন্বয় করে নকশা অঙ্কন করতে হবে।

 

মৌজার সীমানা অঙ্কন :

কিস্তোয়ার জরিপ উপজেলার (থানা) অধীন ভৌগোলিক এলাকাকে পৃথক পৃথক পরিচিতি নম্বর () দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আলাদা করা হয়। পরিচিতি নম্বরসম্পন্ন প্রত্যেকটি এলাকাকে এক একটি মৌজা বলা হয়। মৌজার পরিচিতি নম্বরকে জে.এল. নম্বর (জুরিসডিকশন লিস্ট নম্বর) বলা হয়। কোনো মৌজার আকার বেশ বড় হলে এক খণ্ডে নকশা তৈরি সম্ভব না হলে একাধিক খণ্ডে তৈরি করতে হয় এগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে শিট বলা হয়ে থাকে। তবে শিটগুলোতে দাগ নম্বর ধারাবাহিক থাকবে। একই মৌজার একাধিক শিট হতে পারে, কিন্তু একাধিক নকশা হতে পারে না।

নকশায় মুরব্বা অঙ্কনের পর মৌজার সীমানা রেখা অঙ্কন করতে হয় । এক্ষেত্রে সীমানার কোনো অংশে বিবাদ বা আপত্তি থাকলে ঐ অংশের সীমানা নকশায় অঙ্কন করা যাবে না । তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিবাদের বা আপত্তির রিপোর্ট পেশ করতে হবে এবং বিবাদ নিষ্পত্তির সাথে সাথে মৌজার সীমানা অঙ্কন করতে হবে। সীমানা অঙ্কনের সময় সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী মৌজার একটি প্লট নকশায় আঁকা যেতে পারে। ঘের রেখা হতে সীমানা রেখার দূরত্ব এক শিকলের অধিক হলে অতিরিক্ত স্টেশন নিয়ে অথবা জরিপ রেখা বাড়িয়ে দিয়ে তার থেকে মাপ নিয়ে বা ঘের রেখার সাথে ত্রিভুজ করে ত্রিভুজের বাহুর সাথে অফসেট নিয়ে সীমানা অংকন করা যেতে পারে।

ঘের রেখা সীমানার ভিতর বা বাইরে পড়তে পারে। তবে কিস্তোয়ারের সময় মৌজার সীমানার ভিতরের অংশই কিস্তোয়ার করতে হবে। মৌজার সীমানা নদীতে পড়লে এবং নদীর প্রস্থ 3 শিকলের কম হলে উভয় পাড়ের মৌজাতে তীরসহ নদী দেখাতে হবে এবং নদীর প্রস্থ 3 শিকলের বেশি হলে নদী যে মৌজার ঘেরভুক্ত, সে মৌজায় নদীর পাড়ের নকশা আঁকতে কতে হবে। তীরস্থ মৌজার সাথেই নদীর পাড়ের নকশা আঁকতে হবে । । নদী অধিক প্রশস্থ হলে (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদির মতো)

 

মৌজাধীন জমির দাগগুলোঃ

নকশায় উঠানো কিস্তোয়ারের এ ধাপে আমিন খাকা ও ফিল্ড বুক ব্যবহার না করে মুরব্বা রেখা পরিমাপকালে দু’শিকল পর পর স্থাপিত অর্ধবৃত্তাকার স্টেশন (গোদা) হতে নকশায় সূক্ষ্ম পেন্সিলের হালকা দাগে সিকমি রেখা অঙ্কন করেন এবং সিকমি রেখায় চেইন চালিয়ে শিকল রেখার উপর আইল (কাটান) চিহ্নিত করে ডানে এক শিকল ও বামে এক শিকলের মধ্যে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য চিহ্ন (টেক, বেঁক, প্লটের কোনা ইত্যাদি) এর দূরত্ব (অফসেট) পরিমাপ করে কাটানের (আইলে) সাথে অফসেটের সংযোগের মাধ্যমে প্লটগুলো নকশায় উঠান। (যেহেতু সিকমি রেখা নকশায় দেখানো হয় না তাই এগুলো সূক্ষ্ম হালকা রেখায় টানা হয়। জরিপকালে ফসলের ক্ষতি করা যাবে না। )

 

পরতালের ফিল্ড বুক তৈরিকরণ :

কিস্তোয়ার জরিপের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী কর্তৃক প্রাথমিকভাবে অঙ্কিত নকশার … বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক নকশার আড়াআড়ি শিকল লাইন দিয়ে কাটান ও অফসেট পরীক্ষা করার পদ্ধতিকে পরতাল বলা হয়। পরতাল কালে অফসেট ও কাটানের দূরত্ব সঠিক হলে বা গরমিল গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে হলে নকশার গুণগত মান উত্তম মনে করা হয়।

যদি অফসেট ও কাটানের দূরত্বের গরমিল গ্রহণযোগ্য সীমা বহির্ভূত হয়, তবে নকশা সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয় । যদি পরতাল রেখার দৈর্ঘ্য ৪ গান্টার্স শিকল হতে 25 গান্টার্স শিকল হয়ে থাকে, তবে 15 শিকল হতে 20 শিকল দৈর্ঘ্যের পরতাল রেখা উত্তম। কানুনগো, কারিগরি উপদেষ্টা, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, চার্জ অফিসার এবং সেটেলমেন্ট অফিসার নকশায় পরতাল দিয়ে থাকেন । মনে রাখতে হবে, কিস্তোয়ার সঠিক হয়েছে কি না তা যাচাই করাই পরতালের মূল উদ্দেশ্য।

উপরোক্ত কর্মকর্তাগণ পরতাল দেয়ার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করবেন :

(১) কর্মকর্তা নিজে পরতালের দৈর্ঘ্য, কাটান, অফসেট ইত্যাদির বিবরণ শিটে পেন্সিলে নোট করে কিস্তোয়ারের মান : সম্পর্কে মন্তব্য করবেন।

(২) পরতাল সম্পর্কিত মন্তব্য ও বিবরণ আমিনের নোট খাতায় লেখবেন ।

(৩) পরতাল রেখা নির্বাচনের সময় নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দিবেন—

(ক) পরতাল রেখা শিট এলাকার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন করতে হবে।

(খ) আমিনের দেয়া পরতাল রেখা পরিহার করতে হবে।

(গ) জলমগ্ন ও দুর্গম এলাকা, ঘনবসতি এলাকা পরতাল রেখার জন্য নির্বাচন করতে হবে। কেননা এরূপ এলাকায় গোজামিল দেয়ার সম্ভাবনা অধিক । হতে 20 শিকল দৈর্ঘ্যের পরতাল রেখাই উত্তম।

(ঘ) পরতাল রেখার দৈর্ঘ্য ৪ শিকল হতে 25 শিকল হবে, তবে 15 শিকল (ঙ) মুরব্বা বা সিকমি রেখার সমান্তরালে পরতাল রেখা নির্বাচন করা যাবে না ।

(চ) অফসেট বিন্দু হতে অফসেট বিন্দু পর্যন্ত পরতাল রেখা দেয়া যাবে না ।

(ছ) এক স্টেশন/সাবস্টেশন হতে অন্য স্টেশন/সাবস্টেশন পর্যন্ত পরতাল রেখা টানতে হবে। পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণকে পরতালের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে :

(১) মুরব্বা ও সিকমি লাইন যথাযথ নিয়মে করা হয়েছে কি না।

(২) নকশা শিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না।

(৩) আমিন কর্তৃক সঠিক পেন্সিল ও উপযুক্ত মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়েছে কি না ।

(৪) কিস্তোয়ারে সঠিক দৈর্ঘ্যের শিকল ও নল ব্যবহৃত হয়েছে কি না।

(৫) অফসেট এক শিকলের মধ্যে সীমাবদ্ধ কি না।

(জ) পার্শ্ববর্তী মৌজার সাথে সীমানা মিলকরণ :

পার্শ্ববর্তী মৌজার সাথে মৌজার সীমানা নিয়ে কোনো বিবাদ বা আপত্তি থাকলে বিরোধপূর্ণ এলাকা বাদ দিয়ে বাকি অংশটুকু কিস্তোয়ার করতে হবে এবং সাথে সাথে বিরোধপূর্ণ অংশের উদ্ধৃতি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লেখতে হবে। বিরোধপূর্ণ অংশের বিরোধ নিষ্পত্তির পর কিস্তোয়ারের কাজ শেষ করে নকশায় উঠাতে হবে এবং থোকা লাইন মেপে পার্শ্ববর্তী মৌজার সীমানা নকশায় উদ্ধৃত করতে হবে। তিন মৌজার মিলনস্থলে ত্রিসীমানা চিহ্নের (4) সাহায্যে এবং বিশেষ এলাকায় পিলারের (0) চিহ্নের সাহায্যে সীমানা চিহ্নিত করতে হবে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment