বিকিরণ, ছেদন, ট্র্যাভার্সিং ও পুনশ্ছেদন পদ্ধতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” এর “প্লেন টেবিল জরিপের মৌলিক ধারণা” পাঠ এর অংশ।
Table of Contents
বিকিরণ, ছেদন, ট্র্যাভার্সিং ও পুনশ্ছেদন পদ্ধতি
নিচে পদ্ধতিগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে পৃথক পৃথক আলোচনা করা হল। আলোচনার প্রারম্ভেই বলে রাখা উত্তম যে মাঠের স্টেশনকে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে এবং নকশায় ঐ বিন্দুকে ছোট হাতের অক্ষরে দেখানো হয়েছে।
বিকিরণ পদ্ধতি (Radiation method) :
ত্রিভুজায়ন বা থিওডোলাইট স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকার বিশদ তথ্যাদি নকশায় সন্নিবেশকরণে এ পদ্ধতি বিশেষভাবে – উপযোগী। এতে প্লেন টেবিলকে মাঠের এমন স্থানে বসানো হয় যেন বিভিন্ন বস্তু সহজে দেখা যায়। এ পদ্ধতিতে প্লেন টেবিল স্টেশন হতে টেবিলে আটকানো কাগজে বস্তুকে নিশানা করে রেখা টানা হয় এবং সরাসরি দৈর্ঘীয় পরিমাপ নিয়ে স্কেল অনুসারে কাগজে বস্তুর তাত্ত্বিক অবস্থান দেখানো হয় ।
কার্যপ্রক্রিয়া (Working procedure) :
(চিত্র ঃ ১৭.২) মাঠে একটি স্টেশন (T) নিই যেন এটা হতে ঈন্সিত বস্তুগুলো দেখা যায়। টেবিলটি (T) স্টেশনে অনুভূমিকভাবে স্থাপন করে ড্রয়িং শিট লাগিয়ে নিই এবং ওলন, চিমটার সাহায্যে মাঠের (T) স্টেশনকে ড্রয়িং শিটে (t) স্থাপন করি। এবার টেবিলটিকে (ক্লাম্প স্ক্রু দিয়ে আটকে দিই। এলিডেডকে (t) বিন্দুতে স্পর্শ করিয়ে মাঠের (A) কে নিশানা করে রেখা টেনে নিই এবং মাঠে T হতে A পর্যন্ত মেপে স্কেল অনুযায়ী কাগজে (a) বিন্দু চিহ্নিত করি। এভাবে B, C, D, E, F বস্তুগুলোকে নিশানা করে কাগজে রেখা টেনে সরজমিনে স্টেশন বিন্দু হতে এদের দূরত্ব মেপে স্কেল অনুযায়ী b, c, d, e, f চিহ্নিত করি। প্রয়োজনবোধে বিন্দুগুলোকে রেখা টেনে যুক্ত করি এবং নিশানা রেখা মুছে ফেলি ।
ছেদন পদ্ধতি (Intersection method) :
এ পদ্ধতিতে জরিপকালে একই বস্তুকে দু’ স্টেশন হতে নিশানা করে রেখা টানা হয় এবং রেখাদ্বয়ের ছেদ বিন্দুই বস্তুর অবস্থান নির্দেশ করে। অনভিগম্য বস্তুকে নকশায় সন্নিবেশের জন্য এ পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী। এ পদ্ধতির মাধ্যমেও নকশায় বিস্তারিত তথ্যাদির সন্নিবেশ করা যায় ৷
কার্যপ্রক্রিয়া (Working procedure) :
..(চিত্র ঃ ১৭.৩) সমতল মাঠে দু’টি স্টেশন (A ও B) নির্বাচন করি যেন এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব সরাসরি মাপা যায় এবং স্টেশনদ্বয় হতে ঈন্সিত বস্তুগুলো পরিদৃশ্য হয়। এরপর A স্টেশনে অনুভূমিকভাবে টেবিলটি স্থাপন করে ওলন ও চিমটার সাহায্যে টেবিলের উপর আটকানো ড্রয়িং শিটে a চিহ্নিত করি এবং ক্ল্যাম্প স্ক্রু দিয়ে টেবিল আটকে দিই।
এবার কম্পাসের সাহায্যে কাগজে উত্তর রেখা টেনে দিই। এরপর a কে স্পর্শ করে এলিডেডের মাধ্যমে B কে নিশানা করে রেখা টেনে A ও B এর মধ্যবর্তী দূরত্ব সরাসরি মেপে স্কেল অনুযায়ী ৮ বিন্দু চিহ্নিত করি। অতঃপর a কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে C, D, E, F ইত্যাদিকে নিশানা করে রশ্মি বা রেখা টেনে নিই।
এবার টেবিল স্থানান্তর করে B স্টেশনে কাগজের b স্টেশন চিমটা ও ওলনের সাহায্যে সংস্থাপিত করে পশ্চাদ্দৃশ্যের মাধ্যমে টেবিলের গোড়াপত্তন করি (কম্পাসের সাহায্যেও করা যেতে পারে)। এরপর b কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে C, D, E, F ইত্যাদিকে নিশানা করে রশ্মিগুলো টেনে প্রতিটি বস্তুর রেখাদ্বয়ের ছেদ বিন্দুতে c, d, e, f দ্বারা চিহ্নিত করি। এখন মাঠের A, B, C, D, E, F নকশায় a, b, c, d, e, f বিন্দুতে অবস্থান করে।
ট্রাভার্সিং পদ্ধতি (Traversing method) :
এ পদ্ধতিতেও বিকিরণ পদ্ধতির মতো রশ্মি হতে সরাসরি দূরত্বের পরিমাপের মাধ্যমে স্কেল অনুযায়ী বিভিন্ন বিন্দু চিহ্নিত করা হয়। তবে এতে বিস্তারিত তথ্যাদির জন্য প্রাসঙ্গিক বিন্দুর বা বস্তুর নিশানা রশ্মি ব্যবহার না করে শুধু স্টেশনগুলোর রশ্মি নেয়া হয় এবং দূরত্ব পরিমাপ করে স্টেশন বিন্দুগুলো চিহ্নিত করা হয়। এ পদ্ধতিটি প্রধানত খোলা বা বদ্ধঘের দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
কার্যপ্রক্রিয়া (Working procedure):
শিটে চিহ্নিত করি এবং ক্ল্যাম্প স্ক্রু দিয়ে টেবিলটি আটকে দিই। এবার ট্রাফ কম্পাসের সাহায্যে কাগজে উত্তর রেখা টেনে নিই। a কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে B কে নিশানা করে রশ্মি টেনে নিই এবং মাঠের AB এর মাপ নিয়ে স্কেল অনুযায়ী রশ্মির উপর চ a চিহ্নিত করি। অনুরূপভাবে, E নিশানা করে রশ্মি টেনে চিহ্নিত করি।
এরপর B স্টেশনে (সেন্টারিং, লেভেলিংকরণসহ) পশ্চাদৃশ্যের মাধ্যমে (কম্পাসের মাধ্যমেও করা যাবে) টেবিলের গোড়াপত্তন করি এবং ক্ল্যাম্প ক্ষুর সাহায্যে টেবিল আটকে দিই। b কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে C কে নিশানা করে রশ্মি টানি এবং মাঠে সরাসরি BC দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে একই স্কেলে, রশ্মিতে c বিন্দু চিহ্নিত করি। একইভাবে অন্যান্য স্টেশনে টেবিল সংস্থাপন করে ঘের সমাপ্ত করি। ঘেরের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য দৃশ্যমান পরিমাপযোগ্য দু-একটি স্টেশনের রশি টেনে কাগজের স্টেশনে ছেদ করে কি না দেখে নেয়া উচিত। চিত্রে c, d ও e হতে যাচাই।
পুনশ্ছেদন পদ্ধতি (Resection method) :
এ পদ্ধতিতে যে স্টেশনে টেবিল সংস্থাপিত সে স্টেশন চিহ্নিত করা হয়। ফলত স্টেশন বিন্দু চিহ্নিত হয়ে গেলে বিকিরণ বা ছেদন পদ্ধতিতে নকশায় বিস্তারিত তথ্যাদি সন্নিবেশ করানো যায় ।

কার্যপ্রক্রিয়া (Working pocedure) :
(চিত্র ঃ ১৭.৫) ধরে নিই C বিন্দুর অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করতে হবে। A ও B দুটি দৃশ্যমান অভিগম্য বিন্দু। এখন A তে টেবিল সংস্থাপন করে চিমটা ও ওলনের সাহায্যে টেবিলের উপরের কাগজে a চিহ্নিত করি এবং কম্পাসের সাহায্যে উত্তর রেখা টেনে নিই। টেবিল আটকে দিই। এরপর a কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে B নিশানা করে রশ্মি টানি এবং মাঠে A ও B এর দূরত্ব মেপে স্কেল অনুযায়ী রশ্মিতে চ চিহ্নিত করি।
এরপর একই নিয়মে c বিন্দু দিয়ে রশ্মি টানি এবং আন্দাজ করে রশ্মিতে c। বিন্দু চিহ্নিত করি। অতঃপর টেবিলকে স্থানান্তর করে C, বিন্দুকে c এর উপর রেখে পশ্চাদ্দৃশ্যের মাধ্যমে টেবিলের গোড়াপত্তন করি এবং টেবিল আটকে দিই।
এখন b কে স্পর্শ করে এলিডেড রেখে B কে নিশানা করে রশ্মি টানি, যা ac কে c বিন্দুতে ছেদ করে। এই c বিন্দুই C এর প্রকৃত অবস্থান । যেহেতু পুনশ্ছেদন পদ্ধতিটি ছোট স্কেলে করা হয় তাই সামান্য কেন্দ্রচ্যুতির জন্য নকশায় তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। দু’বিন্দু সমস্যা (Two points problem) ও ত্রিবিন্দু সমস্যা (Three points problem) পুনশ্ছেদন পদ্ধতির দু’টি ক্ষেত্র মাত্র।
আরও দেখুনঃ