প্লেনিমিটারের সাহায্যে নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ প্রক্রিয়া

প্লেনিমিটারের সাহায্যে নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ প্রক্রিয়া – পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” বিষয়ের “নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ” বিভাগ এর একটি পাঠ । প্লেনিমিটার নক্শা হতে ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলোর সাহায্যে যে-কোনো আকারের ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়। বিশেষ করে আঁকাবাঁকা পরিসীমার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ে এগুলো বেশ নিখুঁত ফলাফল দিয়ে থাকে। প্লেনিমিটার প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে, যথা— (১) অ্যামস্লারের পোলার প্লেনিমিটার (২) রোলার প্লেনিমিটার (৩) আধুনিক প্লেনিমিটার।

প্লেনিমিটারের সাহায্যে নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ প্রক্রিয়া

প্লেনিমিটারের সাহায্যে নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ প্রক্রিয়া | নক্শার ক্ষেত্রফল নিরূপণ | সার্ভেয়িং ১

তবে এগুলোর মধ্যে অ্যামস্লারের পোলার প্লেনিমিটারের ব্যবহার অধিক হতো। ছবিতে (চিত্র ১২.১) একটি অ্যামস্লারের পোলার প্লেনিমিটার দেখানো হয়েছে। এ যন্ত্রটি একটি দু’বাহুবিশিষ্ট যন্ত্র, যার বাহু দুটি পরস্পরের সাথে এক বিন্দুতে কজাবদ্ধ থাকে। এ কজাবদ্ধ বিন্দুকে আল বিন্দু (Pivot point) বলা হয়। বাহু দুটির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের নাম নোঙ্গর বাহু (Anchor arm) এবং অন্যটি হচ্ছে ট্রেসিং বাহু (Tracing arm)। ফিক্সড্ স্ক্রু ও স্লো মোশন স্ক্রু (fixed screw & slow motion screw) এর সাহায্যে ট্রেসিং বাহুর দৈর্ঘ্য কমানো-বাড়ানো যায় । নোঙ্গর বাহুর প্রান্তে সুই বা তীক্ষ্ণ শলাকা লাগানো থাকে, যার মাধ্যমে অন্য একটি হালকা ওজনের সাহায্যে এটাকে কাগজের উপর সংস্থাপন করা যায়।

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এতে যন্ত্রটি কার্যরত কালে স্থানান্তরিত হয় না। ট্রেসিং বাহুর প্রান্তের ট্রেসিং বিন্দু (Tracing point) নকশার সীমানা রেখার উপর দিয়ে টেনে নিলে সরণের মান এটার সাথে সংযুক্ত পার্শ্বে রক্ষিত চাকার ঘূর্ণনের পরিমাণ হতে জানা যায়। পাশে রক্ষিত চাকার অক্ষটি ট্রেসিং বাহুর সমান্তরালে থাকে। চাকাটি ট্রেসিং বিন্দু ও আল বিন্দুর মধ্যে অথবা আল বিন্দুর এপাশে বা ওপাশে স্থাপন করা যায় এবং 100 ভাগে ভাগ করা একটি ড্রাম চাকার সাথে সংযুক্ত আছে। চাকাটির ঘূর্ণন সংখ্যা গণনার জন্য এটার সাথে গিয়ার ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে। গণনার চাকতিটি সমান দশ ভাগে ভাগ করা থাকে।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

চাকাটি পূর্ণ একবার ঘুরলে চাক্তি বা ডায়ালটি এক ঘর এবং চাকাটি দশ বার ঘুরলে ডায়ালটি সম্পূর্ণ একবার ঘুরে। ট্রেসিং বাহুর সামনে ও পিছনে বিভিন্ন মানের দাগকাটা থাকে, প্রত্যেক একক পাঠে ক্ষেত্রফলের মানও লেখা থাকে এবং এটার ডানে স্কেলে মান লেখা থাকে। বাহুর উপর দিকে স্কেলের ধ্রুবক (C) মান লেখা থাকে। নোঙ্গর বিন্দু, ট্রেসিং বিন্দু ও চাকার উপর প্লেনিমিটার অবস্থান করে। নকশার সীমানা দিয়ে ট্রেসিং বিন্দুকে টেনে নিলে গতির স্বাভাবিক অবস্থায় চাকাটি ঘোরে এবং পাঠ উঠতে থাকে। কিন্তু যদি ট্রেসিং বিন্দুর গতি অক্ষ বরাবর হয় তবে পাঠ উঠে না এবং চাকাও ঘোরে না। কাজেই চাকার ঘূর্ণনের সংখ্যাটি মোট স্বাভাবিক সরণের মান বুঝায় ।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

ক্ষেত্রফলকে বর্গসেন্টিমিটারে মাপার জন্য ট্রেসিং বাহু স্বাভাবিক স্কেলে সূচকটিকে ক্ল্যাম্প স্ক্রু দিয়ে আটকে দিতে হবে এবং এভাবে পাওয়া প্রতি একক পাঠে ক্ষেত্রফল হবে 100 বর্গসেন্টিমিটার এবং গুণক (M) এর মান হবে 100। যদি নকশাটি অঙ্কনকালে অন্য কোনো স্কেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে প্রথমে বর্গসেন্টিমিটারে ক্ষেত্রফলকে রূপান্তর করে নিতে হবে। যদি নকশার স্কেলটি ট্রেসিং বাহুতে উদ্ধৃত থাকে, তবে ঐ স্থানে সূচকটি স্থাপন করেও সরাসরি ফলাফল নির্ণয় করা যেতে পারে ।

১। সূচকটি নকশার স্কেল অনুযায়ী সেট করতে হবে।

২। সুবিধাজনক অবস্থানে (যেন ট্রেসিং বিন্দুর সঞ্চালন কালে বিঘ্ন না ঘটে) নকশার ভিতরে বা বাইরে নোঙ্গর বিন্দু স্থাপন

করতে হবে।

৩। সীমানার কোনো বিন্দু নির্দিষ্ট করতে হবে এবং ঐ বিন্দুতে ট্রেসিং বিন্দু রাখতে হবে।

৪। ডায়াল ও চাকার প্রারম্ভিক পাঠ লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৫। ট্রেসিং বিন্দুকে সীমানা বরাবর ডানাবর্তে ঘুরিয়ে প্রারম্ভ বিন্দুতে (চিহ্নিত বিন্দুতে) এসে থামাতে হবে এবং

৬। চূড়ান্ত পাঠ লিপিবদ্ধ করতে হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উপরোক্ত প্রক্রিয়া চলাকালে ডায়ালের শূন্য বিন্দুটি ডানাবর্তে বা বামাবর্তে কতবার অতিক্রম করল তা লক্ষ রাখতে হবে, কেননা চূড়ান্ত পাঠের জন্য এটা জানা একান্ত আবশ্যক । এরপর নিম্নের সূত্রের সাহায্যে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হবে :

সূত্রঃ ক্ষেত্রফল, A = M (F.R-I.R + 10N + C)

এখানে, M = গুণবোধক ধ্রুবক বা প্লেনিমিটার ধ্রুবক [এর মান ট্রেসিং বাহুর উপর স্কেলের ভাগের পরেই লেখা থাকে]

F.R = চূড়ান্ত পাঠ

I.R = প্রারম্ভিক পাঠ

N = ডায়ালের শূন্য বিন্দু সূচক বিন্দুকে যতবার অতিক্রম করে। ‘+’ যখন ডায়ালের পাঠ ক্রমশ বাড়তে থাকে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার দিকে যেমন 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 0, 1, 2, এবং ‘-‘ যখন ডায়ালের পাঠ ক্রমশ কমতে থাকে অর্থাৎ

ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে যেমন– 5, 4, 3, 2, 1, 0, 9, 8

C = ধ্রুবক, ট্রেসিং বাহু স্কেলের ঠিক উপরে লেখা থাকে। নোঙ্গর বিন্দু বাইরে থাকলে C = 0 হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment