আজকে আমরা মুক্ত হস্তে অঙ্কন সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড – ২ এর অন্তর্গত।
Table of Contents
মুক্ত হস্তে অঙ্কন
অঙ্কন ছাড়া স্থপতি তার ভাব ব্যক্ত করতে অক্ষম। তবে সবক্ষেত্রে অঙ্কন করার জন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। আবার ডিজাইনের শুরুতেই কিছু চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয়। আর এ সকল চিন্তাকে রেখাচিত্রের বা স্কেচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। প্রাথমিকভাবে এ কাজ করা হয় কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই অর্থাৎ খালি হাতে। এরূপ যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া খালি হাতে শুধু পেনসিলের ও ইরেজারের সাহায্যে কোনো কিছু অঙ্কন করাকে মুক্ত হস্তে অঙ্কন বলে।
মুক্ত হস্তে অঙ্কন করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিম্নরূপ
- কাগজ (কার্টিজ পেপার) বা ড্রয়িং শিট
- পেনসিল –
H, HB, B, 2B, B - ইরেজার
- ডাস্টার
মুক্ত হস্তে অঙ্কন ক্ষেত্রে পেনসিলের ব্যবহার বিধি
মুক্ত হস্তে অঙ্কনের অন্যতম প্রধান উপকরণ পেনসিল। বিভিন্ন ধরনের পেনসিল বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন হালকা রেখা অঙ্কনে শক্ত পেনসিল, গাঢ় রেখায় নরম পেনসিল ইত্যাদি। পেনসিলের নিম্নরূপ সঠিক ব্যবহার মুক্ত হতে অঙ্কনে পারদর্শিতা আনতে সহায়ক হবে-
- পেনসিল বোর্ড বা ভূমির সাথে একটু নত বা Inclined করে ধরতে হবে।
- রেখা সোজা হওয়ার জন্য বোর্ড বা স্কেচ বুকে হাত ঠেকিয়ে নিয়ে আঁকতে হবে।
- ছোট ছোট টুকরা রেখা না এঁকে প্রয়োজনীয় অংশ একবারে আঁকা উচিত।
- লাইন থিকনেস (Line Thickness) একই রাখার জন্য পেনসিলকে দাগ টানার সময় একটু করে ঘুরাতে হবে।
- বৃত্তাকার অংশের জন্য হালকা গাইড রেখা টেনে নেয়া ভালো।
- শেড দেয়ার ক্ষেত্রে পেনসিলকে সমতল (Flat) করার জন্য শিরিষ কাগজে বা অমসৃণ পৃষ্ঠতলে ঘষে
নিতে হবে। - সমান দূরত্বের বহু অঙ্কনে একই পেনসিল ব্যবহার করতে হবে।
- নরম পেনসিল ব্যবহার করার সময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, এক্ষেত্রে হাতের নিচে কাগজ বা ডাস্টার। রেখে যে অংশে কাজ করা প্রয়োজন তা ছাড়া বাকি অংশ ঢেকে কাজ করতে হবে।
- নরম পেনসিলসমূহের কাজ সব শেষে করা ভালো।
- হ্যাচ বা শেড দেয়ার ক্ষেত্রে ড্রয়িং-এর যে অংশে হ্যাচ করা প্রয়োজন সে অংশ ছাড়া বাকি অংশ কাগজ দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
- পেনসিলের অপ্রয়োজনীয় দাগ মুছে ফেলতে নরম ইরেজার বা রাবার ব্যবহার করতে হবে।
- ড্রয়িং সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রুমাল বা ডাস্টার ব্যবহার করতে হবে।
মুক্ত হস্তে অঙ্কন ক্ষেত্রে স্কেলিং পদ্ধতি
স্কেল বলতে কোনো বস্তু অঙ্কনের সময় মূল বস্তুর থেকে নির্দিষ্ট হারে ছোট বা বড় করে বা অনুপাত করে মাপ নিয়ে অঙ্কন করাকে বোঝায়। স্কেলিং বলতে অনুপাত করে মাপ নেয়ার পদ্ধতিকেই বোঝানো হয়। মুক্ত হস্তে অঙ্কনে কোনো প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না কিন্তু বস্তুকে ছোট বা বড় করে আঁকতে হয়। যদি স্কেলিং না করা হয় তবে কোনো ড্রয়িং-এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের কিংবা উচ্চতার সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে।
তাই বস্তুর প্রতিটি অংশের সামঞ্জস্য বা অনুপাত সঠিক করার জন্য স্কেলিং করা প্রয়োজন। স্কেলিং হচ্ছে একটি ড্রয়িং-এর প্রতিটি বস্তুর অংশের মধ্যে আনুপাতিক সমন্বয় সাধন। দেখে দেখে কোনো বস্তু অঙ্কনের সময় প্রাথমিক অবস্থায় স্কেলিং-এর জন্য নিম্ন ধাপসমূহ (চিত্র) অনুসরণ করা যেতে পারে—
- মুক্ত হতে অঙ্কনের সময় কোনো স্কেল থাকে না বলে স্কেলিং-এর জন্য পেনসিল ব্যবহার করা যায়,
- পেনসিলকে বস্ত্র বরাবর সোজা করে ধরতে হবে,
- হাত ও পিঠ বা মেরুদন্ড সোজা রাখতে হবে,
- এক চোখ বন্ধ করে বস্তুর সাথে পেনসিল সমান্তরাল করে মিলাতে হবে,
- বস্তুটি পেনসিলের যতটুকু সমান দেখা যায় তার অনুপাতিক হারে কাগজে চিহ্নিত করতে হবে,
- একই ভাবে বস্তুর প্রস্থ ও প্রতিটি অংশের মাপ নিতে হবে,
- মাপ নেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন হাত, পিঠ বা মেরুদণ্ড বেঁকে না যায়,
- মাপ নেয়ার সময় নিজের অবস্থানও পরিবর্তন করা যাবে না, একবার ঝুঁকে একবার সোজা হয়ে বা সরে যেয়ে মাপ নিলে মাপের তারতম্য হয়ে যাবে,
এছাড়া কাল্পনিক বস্তু বা চোখের সামনে নেই এরূপ বস্তু অঙ্কনের সময় সামগ্রিক দৃশ্যপটের তুলনায় প্রতিটি অংশ তুলনামূলক হারে ছোট বা বড় করে আঁকতে হয়। যদি বস্তুটি একটি মানুষ হয় তবে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, নাক বা হাত-পায়ের অনুপাতের সমন্বয় থাকতে হবে।
আবার যদি কোনো ইমারত ও তার পারিপার্শ্বিক দৃশ্যের হয় তবে ইমারতের আকার, আশে-পাশের মানুষ, গাড়ি, গাছপালার আকার, প্রভৃতির মধ্যে আনুপাতিক সমন্বয় থাকতে হবে। মানুষ যেন গাড়ির চেয়ে বড় না হয়ে যায়। আবার বাড়ির উচ্চতার সাথে জানালা বা বারান্দার উচ্চতার বা মানুষের আকারেরও যেন মিল থাকে। এসব করতে হয় চোখের আন্দাজে কল্পনা করে যার কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই।
এছাড়া হাতের পেনসিল, বা এরূপ লম্ব কোনো কাঠির সাহায্যে নিম্নের চিত্রের মত করে স্কেলিং করা যায়। সাধারণত পেনসিলের সাহায্যেই চিত্রের (চিত্র) মত করে স্কেলিং করা হয়ে থাকে।
মুক্ত হস্তে অঙ্কন পদ্ধতি
পেনসিলের সাহায্যে নিম্নের চিত্রের মত করে প্রথমে আকার আকৃতি বা কাঠামোটির অনুপাত ঠিক করে পরে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ বস্তু বা মানুষ বা চেহারা আঁকতে হবে।
প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মুক্তহস্তে অঙ্কন কাকে বলে?
২. মুক্তহস্তে অঙ্কন করার উপকরণসমূহের নাম লেখ ।
৩. মুক্তহস্তে অঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত পেনসিলের গ্রেডসমূহের নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মুক্তহস্তে অঙ্কনে পেনসিলের ব্যবহার বিধি বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. মুক্তহস্তে অঙ্কনে স্কেলিং-এর ব্যবহার বিধি বর্ণনা কর।
২. রঙের ভাষাগত বর্ণনা বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বর্ণনা কর ।
৩. মুক্তহস্তে একটি মানুষের বিভিন্ন ভঙ্গি অঙ্কন কর।
আরও দেখুনঃ