সমতলীয় জরিপে পরিমাপের এককসমূহ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১ ” বিষয়ের “ক্ষেত্রফল নিরূপণের বিভিন্ন পদ্ধতি” বিভাগের একটি পাঠ |
Table of Contents
সমতলীয় জরিপে পরিমাপের এককসমূহ
ক্ষেত্রবিশেষে ঢালু দূরত্ব (inclined distance) ও ঢালু কোণ (inclined angle) এর পরিমাপ নেয়ার দরকার হলে নকশা তৈরিতে এগুলোকে অনুভূমিক পরিমাপে রূপান্তর করে নিতে হয়।
মূলত জরিপের ক্ষেত্রে দু’ ধরনের পরিমাপ নেয়া হয়, যথা—
(ক) রৈখিক পরিমাপ (Linear measurement)
(i) অনুভূমিক দূরত্ব (Horizontal distance)
(ii) উল্লম্ব দূরত্ব (Vertical distance)
(খ) কৌণিক পরিমাপ (Angular measurement)
(i) অনুভূমিক কোণ (Horizontal angle)
(ii) উল্লম্ব কোণ (Vertical angle ) ।
(ক) রৈখিক পরিমাপের একক :
রৈখিক পরিমাপে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, পুরুত্ব, ব্যাস, ব্যাসার্ধ ইত্যাদির মাপ মেট্রিক পদ্ধতিতে মিটার বা এর গুণক (ডেকামিটার, হেক্টোমিটার, কিলোমিটার ইত্যাদি) বা এর বিভাজক (ডেসিমিটার, সেন্টিমিটার, মিলিমিটার ইত্যাদি) এবং ব্রিটিশ পদ্ধতিতে গজ বা এর গুণক (চেইন, ফার্লং, মাইল ইত্যাদি) বা এর বিভাজক (ফুট, ই করা হয়ে থাকে।ইঞ্চি ইত্যাদি)-এ পরিমাপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিমাপের একক হিসাবে (ক) এফ.পি.এস পদ্ধতি বা ব্রিটিশ পদ্ধতি (ফুট, পাউন্ড, সেকেন্ড পদ্ধতি )
(খ) সি.জি.এস পদ্ধতি বা মেট্রিক পদ্ধতি (সেন্টিমিটার, গ্রাম, সেকেন্ড পদ্ধতি)
ও (গ) এস.আই ইউনিট পদ্ধতি (সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) প্রচলিত আছে। আমাদের দেশে ব্রিটিশ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এ পদ্ধতির স্থলে মেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও ব্রিটিশ পদ্ধতির প্রচলন দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে পরিবর্তনের দিকে। এমতাবস্থায় উক্ত পদ্ধতিদ্বয়ের যোগসূত্রের জন্য উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অবগত হওয়া দরকার। এস. আই. ইউনিট পদ্ধতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেট্রিক পদ্ধতির অনুরূপ।
প্রমাণ গজ বা আদর্শ গজ (Standard yard) :
আন্তর্জাতিক “বোর্ড অব ট্রেড” এর লন্ডনস্থ অফিসে সার্বক্ষণিক 62° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় সংরক্ষিত একটি কাঁসার (Bronze) দণ্ডের উপর স্থাপিত দু’টি সোনার পিন (Gold pin) এর মধ্যবর্তী দূরত্বকে প্রমাণ গজ বা আদর্শ গজ (Standard yard) ধরা হয়। এ দূরত্বের সমান তিন ভাগের এক ভাগ দূরত্বই 1 ফুট।

আন্তর্জাতিক প্রটোটাইপ মিটার (International prototype meter) ঃ ফ্রান্সের সেভরিজ (Sevres – France)-এ আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ সংস্থার সংরক্ষণাগারে স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলের চাপে 0° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষিত 90% প্লাটিনাম ও 10% ইরেডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি দণ্ডের উপর দু’টি চিহ্নিত দাগের মধ্যবর্তী দূরত্বকে আন্তর্জাতিক প্রটোটাইপ মিটার (International prototype meter) বলা হয়। এ দূরত্বের সমান 100 ভাগের 1 ভাগ হলো । সেন্টিমিটার।
নিম্নে ব্রিটিশ একক ও মেট্রিক এককের তালিকা দেয়া হলো (শুধুমাত্র দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল ও আয়তনের একক) :
(ক) কোণ পরিমাপের একক :
কোণ পরিমাপের মূল এক রেডিয়ান। কোনো বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমপরিমাণ দৈর্ঘ্যের পরিধি ঐ বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাই রেডিয়ান। যেহেতু বৃত্তের পরিধি সমান 27 (r ব্যাসার্ধ) অত্রএব পূর্ণবৃত্ত কোণ সমান 2 রেডিয়ান। রেডিয়ান এর ব্যবহার সরজমিনের কাজে তেমন দেখা যায় না । সরজমিনের কাজে ক্ষেত্রভেদে নিম্নের কোণ পরিমাপের এককগুলো সচরাচর ব্যবহৃত।
(খ) ষাটমূল পদ্ধতি (Sexagesimal system) :
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সমতলীয় জরিপে এ পদ্ধতির কোণ পরিমাপের একক সচরাচর ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে পূর্ণবৃত্ত কোণের পরিমাণ 360 ডিগ্রি ( 360°)। প্রতি ডিগ্রিকে 60 মিনিটে (60) এবং প্রতি মিনিটকে 60 সেকেন্ডে (60) রূপান্তর করা হয়।
অর্থাৎ 1° = 60 মিনিট ( 60 )
এবং 1 = 60 সেকেন্ড ( 60 )
360 এ পদ্ধতি 1 রেডিয়ান = ( = 3.1415927 নিলে) 2 t = 57.29578° বা 206265″ বা 57°17 45
(গ) শতমূল পদ্ধতি (Centisemal System) :
পশ্চিম ইউরোপ এর কয়েকটি দেশে এ পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়। এ পদ্ধতিতে পূর্ণবৃত্ত কোণের পরিমাণ 400 গ্রেড (4005)। প্রতি গ্রেডকে 100 শতমূল মিনিটে (100) এবং প্রতি শতমূল মিনিটকে 100CC শতমূল সেকেন্ডে রূপান্তর করা হয়। অর্থাৎ, 1 গ্রেড বা 1 = 100 শতমূল মিনিট (100) = 100 শতমূল সেকেন্ড (100) এ পদ্ধতিতে ৷ রেডিয়ান = 63.661977 বা 638 66° 19.77
(ঘ) ঘণ্টা পদ্ধতি (Hour system) ঃ
এ পদ্ধতিটি বিশেষত নৈসর্গিক বস্তুর (নক্ষত্র, ইত্যাদি জরিপে) অবস্থান, পরিক্রমণ, সম্পর্কে জানার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে পূর্ণবৃত্ত কোণকে 24 ঘণ্টায় (24), প্রতি ঘণ্টাকে 60 মিনিটে (60″), প্রতি মিনিটকে 60 সেকেন্ডে (60) রূপান্তর করা হয়।
অর্থাৎ 1″ = 60m 1th = 60 id com এ সকল পদ্ধতিগুলো ছাড়াও সামরিক কাজে আর্টিলারি পদ্ধতি (Artillery system) ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এতে পূর্ণবৃত্ত কোণ 6400 মিলে (mil)-এ ভাগ করা হয়। এতে 1 মিল (mil) = 0.00098174770 রেডিয়ান ।
আরও দেখুন: