বিভিন্ন জরিপের শ্রেণিবিভাগ

জরিপের শ্রেণিবিভাগ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” বিষয়ের ” জরিপের ধারণা” বিভাগের একটি পাঠ। জরিপের বিভিন্ন দিকের উপর ভিত্তি করে (যেমন— পৃথিবীর আকার, স্থান বা এলাকার প্রকৃতি, জরিপের উদ্দেশ্য, জরিপে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জরিপে ব্যবহৃত পদ্ধতি ইত্যাদি) জরিপকে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। নিম্নে জরিপের বিবেচ্য দিক উল্লেখ করে শ্রেণিবিভাগ উদ্ধৃত করা হলো।

Table of Contents

জরিপের শ্রেণিবিভাগ

(অ) পৃথিবীর আকারের উপর ভিত্তি করে (Based on shape of earth) জরিপকে দু’ ভাগে ভাগ করা হয় ঃ

(ক) ভূমণ্ডলীয় জরিপ ও

(খ) সমতলীয় জরিপ।

এ শ্রেণিবিভাগটি মূলত জরিপের প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ (Primary division)। 

 

(আ) জরিপ কাজের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে (Based on nature of field of survey) জরিপকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় :

১। ভূমি জরিপ (Land survey)

২। সামুদ্রিক জরিপ (Marine বা Hydrographic survey) বা পানি সম্বন্ধীয় জরিপ 

৩। জ্যোতিষীয় জরিপ বা আকাশ সম্বন্ধীয় জরিপ (Astronomical survey) ইত্যাদি ।

জরিপের শ্রেণিবিভাগ 
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

১। ভূমি জরিপকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—

(ক) ভূ-সংস্থানিক জরিপ (Topographical survey)

(খ) কিস্তোয়ার জরিপ (Cadastral survey)

(গ) নগর জরিপ (City survey)

(ঘ) প্রকৌশল জরিপ (Engineering survey)।

(ক) ভূ-সংস্থানিক জরিপ :

ভূ-সংস্থানিক জরিপের সাহায্যে দৈর্ঘ্য, কৌণিক পরিমাপ নেয়া হয়। এতে অনুভূমিক ও উল্লম্ব পরিমাপ গ্রহণ করা হয়। এ সব পরিমাপ হতে পাহাড়, পর্বত, নদী, নালা, বনভূমি ইত্যাদির অবস্থান জেনে নেয়া যায়। এতদভিন্ন রেলপথ, সড়কপথ, খাল, শহর, গ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় ।

 

(খ) কিস্তোয়ার জরিপ :

ভূমি বণ্টন, সীমা নির্ধারণ, জমির পরিমাণ নিরূপণ, ভূমি ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে সীমারেখা নির্ধারণ, দেশের সীমান্ত নির্ধারণ, ইত্যাদি কাজে এ জরিপের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। ভূমি দাগে দাগে মেপে নক্‌শা প্রণয়নে এ জরিপ বিশেষ

উপযোগী। এতদভিন্ন এতে ভূ-সংস্থানিক জরিপের বিভিন্ন তথ্যাদিও জানা যায় ।

 

(গ) নগর জরিপ :

এ জরিপের মাধ্যমে নগরের রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহ পদ্ধতি, পয়ঃপ্রণালি ও খণ্ড খণ্ড ভূমির সীমানা দেখানো হয় ।

 

(ঘ) প্রকৌশল জরিপ :

প্রকৌশল জরিপের মাধ্যমে রাস্তা, রেলপথ, সড়ক, জলাধার, জল সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালি ইত্যাদির অ্যালাইনমেন্ট স্থাপন করা হয় এবং ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় কাজের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপকে

(১) তদন্ত জরিপ— প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও খসড়া ব্যয় নির্ধারণের জন্য, 

(২) প্রাথমিক জরিপপ্রকল্পের স্থান নির্ধারণ, বিস্তারিত তথ্য ও প্রকৃত ব্যয় নির্ধারণের জন্য ও 

(৩) সংস্থাপন জরিপ— প্রকল্পের প্রকৃত অবস্থান ভূমিতে সংস্থাপনের জন্য, এ তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

 

জরিপের শ্রেণিবিভাগ 

 

২। পানি সম্বন্ধীয় জরিপ বা সামুদ্রিক জরিপ :

পানি সম্বন্ধীয় জরিপ পানি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন তথ্যাদি (যেমন— নৌচলাচল, প্রোতাশ্রয়, সমুদ্রের পানির গড় উচ্চতা (M.S.L), পানি সরবরাহ ইত্যাদি) সংগ্রহের জন্য করা হয়। সমুদ্রের জোয়ার, কূলবর্তী এলাকায় জরিপ, স্রোতস্বিনীয় ক্ষরণ ক্ষমতা (Discharge), সাউন্ডিং এর মাধ্যমে পানির গভীরতা নির্ণয় ইত্যাদি তথ্যসংগ্রহেও এ জরিপ করা হয় ।

৩। জ্যোতিষীয় জরিপ বা আকাশ সম্বন্ধীয় জরিপ :

যে-কোনো বিন্দুর পরম অবস্থান জানার জন্য এ জরিপ করা হয়। এতে সূর্য বা অন্যান্য স্থির নক্ষত্রের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরম অবস্থান ও দিক স্থির করা হয়।

(ই) জরিপের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে (Based on the object of survey) জরিপকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় ঃ

১। প্রকৌশল জরিপ (Engineering survey)

২। সামরিক জরিপ (Military survey)

৪। ভূতাত্ত্বিক জরিপ (Geological survey)

৩। খনি জরিপ (Mine survey)

৫ । প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (Archeological survey) ইত্যাদি ।

 

জরিপের শ্রেণিবিভাগ 

 

১। প্রকৌশল জরিপ :

বিভিন্ন প্রকৌশল কাজের ডিজাইনের ক্ষেত্রে— রাস্তা, জলাধার, পয়ঃপ্রণালি, পানি সরবরাহ ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য এ জরিপ করা হয়। 

 

২। সামরিক জরিপ ঃ

যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণের জন্য তথ্যাদি সংগ্রহের নিমিত্ত এ জরিপ করা হয় ।

 

৩। খনি জরিপ ঃ

খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত তথ্যাদি জানার জন্য এ জরিপ করা হয়।

 

৪। ভূতাত্ত্বিক জরিপ ঃ

ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তর ও গঠন সম্পর্কে জানার জন্য এ জরিপ করা হয়।

 

৫। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ঃ

পুরাতত্ত্ব সংক্রান্ত তথ্যাদি জানার জন্য এ জরিপ করা হয়।

 

(ঈ) জরিপ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে (Based on instrument employed) জরিপকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়:

এক্ষেত্রে শ্রেণিবিভাগের সময় জরিপে ব্যবহৃত প্রধান যন্ত্রের নামানুসারে জরিপের নামকরণ করা হয় ।

১। শিকল জরিপ (Chain survey)

২। কম্পাস্ জরিপ (Compass survey)

৩। প্লেন টেবিল জরিপ (Plane table survey)

৪। থিওডোলাইট জরিপ (Theodolite survey)

৫ । ট্যাকোমিটার জরিপ (Tachometric survey) 

৬। বিমান আলোকচিত্র জরিপ (Photographic aerial survey) ইত্যাদি।

 

১। শিকল জরিপ (Chain survey) ঃ

এ জরিপে কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে কতকগুলো ত্রিভুজে বিভক্ত করে সরজমিনে সরাসরি ত্রিভুজগুলোর সব বাহুর পরিমাপ শিকল বা টেপের সাহায্যে নেয়া হয়। এতে কোণের পরিমাপ গ্রহণ করা হয় না। ত্রিভুজের বাহুর মাপ সরজমিনে নেয়ায় অর্থাৎ ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য জানা থাকায় নক্শা অংকনে অসুবিধা হয় না এবং ক্ষেত্রফল বের করাও সহজ হয়।

 

২। কম্পাস জরিপ (Compass survey) :

প্রধানত কম্পাসের সাহায্যে এ জরিপ করা হয়। কম্পাস একটা কোণ মাপক যন্ত্র । এ জরিপ কৌণিক জরিপের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা কোনো রেখার শুধু দিক জানা যায়। তাই দৈর্ঘ্য জানার জন্য (তথ্যাদির উপর নির্ভর করে) শিকল বা টেপ ব্যবহার করতে হয়। তবে সব বাহুর দৈর্ঘ্য মাপার দরকার পড়ে না। এ জরিপের মাধ্যমেও নক্শা প্রণয়ন করা যায়। ঘের জরিপের জন্য কম্পাস জরিপ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

 

৩। প্লেন টেবিল জরিপ (Plane table survey) ঃ

এ জরিপ ঘের (Travers) জরিপের অন্তর্ভুক্ত। এতে মাঠের কাজ ও নকশার অংকন কাজ একযোগে চলতে থাকে। সমান্তরাল ও সমানুপাতিক নীতির উপর এ জরিপ প্রতিষ্ঠিত। যেখানে উচ্চমানের বিশুদ্ধতা খুব জরুরি নয় সেখানে ঘের দেয়ার জন্য এ জরিপ বিশেষভাবে উপযোগী।

 

৪। থিওডোলাইট জরিপ (Theodolite survey) ঃ

এটি একটি কৌণিক জরিপ। উচ্চমানের বিশুদ্ধ ঘের দেয়ার জন্য এ জরিপ বিশেষভাবে উপযোগী। ত্রিভুজায়ন জরিপও মূলত থিওডোলাইট জরিপ। এ জরিপে ত্রিভুজ বা বহুভুজগুলোর প্রত্যেকটি কোণ মাপা হয় এবং হিসেবের জন্য যে-সব বাহুর দৈর্ঘ্য জানার দরকার হয় কেবলমাত্র ঐ সব বাহুর দৈর্ঘ্যই মাপা হয়। সাধারণত স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে এ জরিপের নকশা তৈরি করা হয় । 

 

৫। ট্যাকোমিটার জরিপ (Tachometric survey) ঃ

এ জরিপের মাধ্যমে কোণ, বাহুর দৈর্ঘ্য ও এলিভেশন ইত্যাদি জানা যায় । মূলত দ্রুত পরিমাপের জন্যই এ জরিপ করা হয়। এ জরিপে সহজেই বিভিন্ন বিন্দুর অনুভূমিক দূরত্ব ও উল্লম্ব দূরত্ব জানা যায় । 

 

৬। বিমান আলোকচিত্র জরিপ :

আলোক চিত্র নেয়ার মাধ্যমে এ জরিপ করা হয়। এতে কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর আলোকচিত্রের আকারের সাথে প্রকৃত আকারের তুলনা করে অন্যান্য ক্ষেত্র বা বস্তুর পরিমাপ বুঝা যায়। সচরাচর উপরের দিক হতে আলোকচিত্ৰ নেয়া হয়। এতে পৃথক কোনো নকশা অংকনের দরকার হয় না। বিস্তারিত ও নিখুঁত ছোট স্কেলের নক্শার জন্য এ জরিপ বিশেষ উপযোগী।

 

(উ) জরিপ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে (Based on method employed) জরিপকে নিম্নোক্ত দু’ভাগে ভাগ করা যায় ঃ

১। ত্রিভুজায়ন জরিপ (Triangulation survey) ২। ঘের জরিপ (Traverse survey)।

১। ত্রিভুজায়ন জরিপ ঃ যদি জরিপতব্য এলাকাকে সারিবদ্ধ ত্রিভুজে বিভক্ত করে জরিপ কাজ করা হয় তবে একে ত্রিভুজায়ন জরিপ পদ্ধতি বলা হয়।

২। ঘের জরিপ ঃ যদি জরিপতব্য এলাকাকে ঘের দেয়ার মাধ্যমে জরিপ করা হয় তবে একে ঘের জরিপ পদ্ধতি বলা হয় ।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment