আর্কিটেকচারে ইমারত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আর্কিটেকচারে ইমারত। এই পাঠটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের, এসএসসি পর্যায়ের, ভোকেশনাল ডিসিপ্লিনের “আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড ১” বিষয়ের একটি পাঠ।

আর্কিটেকচারে ইমারত

আর্কিটেকচারে ইমারত

ইমারত বা বিল্ডিং হচ্ছে দেয়াল, মেঝে, ছাদ, দরজা, জানালা প্রভৃতির সমন্বয়ে একটি সুসংগঠিত আবদ্ধ বা Covered কাঠামো যা ভিন্ন ভিন্ন কাজে (যেমন— আবাসস্থল, শিক্ষা ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, ভাণ্ডার, কলকারখানা ইত্যাদি) ব্যবহৃত হয়। এটি মানুষকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করে। একে আরামদায়ক করার জন্য মানুষ এতে আরও আনুষাঙ্গিক উপাদান সংযোগ করে থাকে।

ইমারত আকার, গঠন ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যেমন—

  • আবাসিক ইমারত বা ভবন (Residential Building) : যেমন- বাড়ি, ডরমিটরি, হোস্টেল ইত্যাদি,
  • বাণিজ্যিক ইমারত বা ভবন (Commercial Building): যেমন- . অফিস, মার্কেট ইত্যাদি,
  • শিক্ষায়তন বা শিক্ষামূলক ইমারত (Educational Building): যেমন— কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি,
  • চিকিৎসাবিষয়ক ইমারত বা ভবন (Medical Building): যেমন— হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্ৰ ইত্যাদি,
  • সরকারি ইমারত বা ভবন (Public Building) : যেমন – পাবলিক লাইব্রেরি, কোর্ট, সংসদ ভবন ইত্যাদি,
  • সমবায় ভবন (Assembly Building ): যেমন— ধর্মীয় উপাসনালয়, জাদুঘর, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল ইত্যাদি,
  • শিল্প কারখানা সংক্রান্ত ইমারত বা ভবন (Factory Building) : যেমন – কল কারখানা, কোল্ড স্টোরেজ ইত্যাদি,

উল্লেখ্য যে কখনও কখনও পাবলিক ভবন ও অ্যাসেম্বলি ভবনকে একই বিভাগে ধরা হয়।

নিচে একটি ইমারতের বিভিন্ন অংশের নাম চিত্রে প্রদর্শিত হলো।

  • ভিত্তি বা Foundation: কাঠামোর সর্বনিম্ন অংশকে ভিত্তি বলে।
  • প্লিন্থ বা Plinth: ভূমি থেকে মেঝে পর্যন্ত উচ্চতাকে পিন্থ বলে ।
  • দেয়াল বা Wall: কক্ষকে বিভক্ত করার জন্য বা বেস্টনী দেয়া বা enclose করার জন্য যা ব্যবহার করা হয় তাকে দেয়াল বলে। এটি কক্ষে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, রোদ বৃষ্টি, ঠান্ডা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।
  • কলাম বা Column: কাঠামোর একক খাড়া অংশ যা উপরস্থ কাঠামোর বা ছাদের ভার বহন করে মাটিতে ছড়িয়ে দেয়।
  • মেঝে বা Floor: কাঠামোর অনুভূমিক অংশ যা বিভক্ত করে বিভিন্ন কক্ষ তৈরি হয় এবং খাড়া ভাবে পরপর বসিয়ে অনেক তলা বানানো হয়।
  • দরজা বা Door: কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়া, মালপত্র আনা-নেয়া করার জন্য দেয়ালে যে ফাঁকা স্থান রাখা হয় এবং প্রয়োজনে খোলা ও বন্ধ করা যায় তাকে দরজা বলে।
  • জানালা বা Window: কক্ষে শুধুমাত্র আলো বাতাস প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য সাধারণত: বহিঃদেয়ালে যে ফাঁকা স্থান রাখা হয় এবং প্রয়োজনে খোলা ও বন্ধ করা যায় তাকে জানালা বলে । রেলিং বা Railing: বারান্দা, সিঁড়ি, টেরাস প্রভৃতি উন্মুক্ত স্থানের কিনারে ঘেষে নিরাপত্তার জন্য যে স্বল্প উঁচু দেয়াল বা বেষ্টনী দেয়া হয় তাকে রেলিং বলে।
  • সিঁড়ি বা Stair: অনুভূমিক ও লম্ব তলের সমন্বয়ে তৈরি ধাপ এর সেট যা খাড়া দূরত্ব অতিক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে সিঁড়ি বলে।
  • সানশেড বা Sunshade: কক্ষে অপ্রয়োজনীয় আলো ও তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জানালা বা ফাঁকা স্থানের উপর যে অনুভূমিক অংশ তৈরি করা হয় তাকে সানশেড বলে। সানশেড খাড়া বা নত বা সমন্বয় যোগ্যও হতে পারে ।
  • লিন্টেল বা Lintel: যে অনুভূমিক কাঠামোর সাহায্যে ফাঁকা স্থানের উপরস্থ লোডকে বহন করে পাশের দেয়ালে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাকে লিন্টেল বলে।
  • কার্ণিশ বা Cornice: ছাদের বাড়তি অংশ, অপ্রয়োজনীয় বৃষ্টি ও তাপ থেকে দেয়ালকে রক্ষা করা জন্য ছাদ চারিদিকে বাড়িয়ে যে কাঠামো তৈরি করা হয় তাকে কার্নিশ বলে।
  • ছাদ বা Roof: সবচেয়ে উপরের মেঝে বা ফ্লোর অর্থাৎ কাঠামোর সবচেয়ে উপরের অনুভূমিক অংশ যার উপরে আর কোনো তলা বা ফ্লোর থাকে না । এটি মানুষকে নিরাপত্তা দেয় ও রোদ-বৃষ্টি, তাপ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে ।
  • প্যারাপেট বা Parapet: এক ধরনের রেলিং যা ছাদের চারপাশের কিনার ঘেঁষে থাকে।
  • বিল্ডিং ফিনিশ বা Building Finishes: প্লাস্টার, পয়েন্টিং, বার্নিশ ইত্যাদি যা ছাড়া বিল্ডিংকে অসম্পূর্ণ মনে হয় ।
  • বিল্ডিং সার্ভিস বা Building Services: পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, এয়ার কন্ডিশনিং ইত্যাদি যা বিল্ডিংকে কার্যোপযোগী বা বসবাস উপযোগী ও আরামদায়ক করে।

 

 

আর্কিটেকচারে ইমারত

চিত্র- ১১.১: একটি ইমারতের বিভিন্ন অংশ

ভিত্তি ও ভিত্তি

 ভিত্তি

কাঠামোর সর্বনিম্ন অংশকে ভিত্তি বা বুনিয়াদ বলে। ভিত্তি কাঠামোর উপরের অংশের লোড বহন করে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে কাঠামোর উপরস্থ আরোপিত ও নিজস্ব তার মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করা হয় তাকে ভিত্তি বা বুনিয়াদ বলে। এটি ইট, পাথর বা কংক্রিটের তৈরি হতে পারে।

 

আর্কিটেকচারে ইমারত

চিত্র ১১.২.১০ ভিত্তি

ভিত্তি প্রধানত দুই প্রকার:

  • অপতীর ভিত্তি
  • স্পেড ফুটিং (Spread Footing)
  • কৰাইভ ফুটিং (Combined Footing)
  • স্ট্র্যাপ ফুটিং (Strap Footing)
  • ম্যাট বা র্যাফট ভিত্তি ( Mat or Raft Foundation)

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

গভীর ভিত্তি

  • পাইল (Piles)
  • কঙ্কার ড্যাম (Coffer Dama)
  • কেইলন বা ওয়েল ভিত্তি (Caissons or Well Foundation)

ভিত্তিতল

ভূ-নিম্নস্থ শক্ত মাটির উপরে বা পার্শ্ব ধর্ষণ বলের মাধ্যমে বা সম্মিলিত প্রক্রিয়ায় ভিত্তিকে স্থাপন করা হয়। যখন ভূ-নিম্নস্থ শক্ত মাটির উপরে ভিত্তিকে স্থাপন করা হয় তখন মাটিকে অধিকতর শক্ত করা প্রয়োজন হয়। এই বিশেষ ভাবে নির্মিত ভিত্তির নিম্নস্থ শক্ত ভূমিতলকে ভিত্তিতল বা ফাউন্ডেশন বেড বলে।

 

আর্কিটেকচারে ইমারত

চিত্র ১১.২ (খ): ভিত্তিতল বা ফাউন্ডেশন বেড

সাব স্ট্রাকচার ও সুপার স্ট্রাকচার

সাব স্ট্রাকচার

কাঠামোকে সোজা মাটির উপরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য মাটির নিচে কিছুটা গভীর থেকে কাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়। মাটির নিচের এই অংশকেই সাব স্ট্রাকচার বলে। কাঠামোর মাটির নিচের যে অংশের উপর উপরস্থ কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকে তাকে সাব স্ট্রাকচার বলে।

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ইমারত কাকে বলে?

২. ইমারত কত প্রকার ও কী কী?

৩, ভিত্তি কাকে বলে?

৪. ভিত্তি কত প্রকার ও কী কী?

৫. সাব স্ট্রাকচারের বিভিন্ন অংশের নাম দেখ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. একটি ইমারতের বিভিন্ন অংশের নাম লেখ ।

২. চিত্র সহ সাব স্ট্রাকচারের সংজ্ঞা দাও। ৩. ভিত্তি ও ভিত্তি তদের পার্থক্য লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১. একটি ইমারতের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দাও।

২. সাব স্ট্রাকচার ও সুপার স্ট্রাকচারের পার্থক্য বর্ণনা কর ।

৩. একটি সুপার স্ট্রাকচারের চিত্র অঙ্কন করে বিভিন্ন অংশের নাম লেখ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment