আর্কিটেকচারে ভিউ

আজকে আমরা আর্কিটেকচারে ভিউ সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড – ২ এর অন্তর্গত।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

ভিউ-এর সংজ্ঞা

কোনো বস্তুকে যেরূপ দেখায় তাকেই ঐ বস্তুর ভিউ বলে। অন্যভাবে বস্তুর পৃষ্ঠ তলের সীমারেখার প্রতিটি বিন্দু থেকে কোনো তলে লম্ব রেখা টানা হলে যে চিত্র পাওয়া যায় তাকে ভিউ বলে। স্থাপত্যিক অঙ্কনে ভিউ অত্যাবশ্যক । আমরা যা কিছু অঙ্কন করি যেমন বস্তুকে উপর, নিচ, পার্শ্ব কিংবা দূর থেকে যে কোনোভাবে দেখা যায়। এদের প্রতিটিই একটি আলাদা ভিউ। কোনো কোনো ভিউতে আলাদাভাবে বস্তুকে পুরোপুরি বোঝা যায় না আবার কখনও একটি ভিউতে বস্তুর প্রকৃত রূপ বোঝা যায়। ভিউ ছাড়া স্থাপত্যিক ডিজাইন অসম্ভব।

ভিউ এর শ্রেণিবিভাগ

সাধারণভাবে বস্তুকে উপর, নীচ, পার্শ্ব কিংবা দুর থেকে যে কোনাভাবে দেখা যায়। এরূপ ক্ষেত্রে ভিউকে উপরের দৃশ্য (Top View), সম্মুখ দৃশ্য (Front View), পার্শ্বদৃশ্য ( Side View) বলা হয়।

সম্মুখ দৃশ্য বা ভিউ (Front View):

কোনো বস্তুকে সামনে থেকে যেমন দেখায় তাকে সম্মুখ দৃশ্য (Front View) বলে।

পার্শ্ব দৃশ্য বা ভিউ (Side View):

কোনো বস্তুকে পার্শ্ব থেকে যেমন দেখায় তাকে পার্শ্ব দৃশ্য (Side View) বলে। এটি ডান পার্শ্ব ভিউ (Right Side View) বা বাম পার্শ্ব ভিউ (Left Side View) হতে পারে।

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র

 

উপরের ভিউ (Top View):

কোনো বস্তুকে উপর থেকে যেমন দেখায় তাকে উপরের দৃশ্য বা ভিউ (Top View) বলে।

এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং বা স্থাপত্যিক ড্রয়িং-এ ভিউকে নিম্নক্ত ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—

  • আইসোমেট্রিক ভিউ (Isometric View)
  • অবলিক ভিউ (Oblique View )
  • অর্থোগ্রাফিক ভিউ (Orthographic View)
  • পার্সপেক্টিভ ভিউ (Perspective View )
  • এক্সোনোমেট্রিক ভিউ (Axonometric View)

আইসোমেট্রিক ভিউ (Isometric View )

বস্তুকে ভূমির সাথে ৩০° কোণে উঁচু করে ধরলে বস্তুটিকে যেরূপ দেখা যায় তাকে ঐ বস্তুর আইসোমেট্রিক ভিউ বলে। এটি বস্তুর একটি ত্রি-মাত্রিক কাল্পনিক ভিউ যাতে বস্তুর সম্মুখ (Front), পার্শ্ব (Side) ও উপরের (Top) ভিউ দেখা যায় বলে একটি ভিউতে বস্তুর বাস্তব চেহারা বোঝা যায়। এতে বস্তুটির আকার আকৃতির কোনো পরিবর্তন করা হয় না। সাধারণ ছোটো কোন বস্তু বা কাঠামো সম্পর্কে ত্রি-মাত্রিক ধারণা নেয়ার জন্য খুবই উপযোগী। যে কোনো ব্যক্তি সহজেই বুঝতে পারে, এজন্য কোনো কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।

বস্তুর আইসোমেট্রিক ভিউ অঙ্কন প্রণালি

১. কোনো বস্তু অঙ্কনের সময় প্রথমে হালকা করে ভূমি বা একটি অনুভূমিক রেখা অঙ্কন করতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

২. 30°- 60° সেট স্কোয়ারকে প্যারালাল বার বা টী স্কোয়ার এর উপর সেট করে 30° কোণে ডান ও বাম পাশে পরস্পর ছেদ করিয়ে দুটি লাইন বা রেখা আঁকতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৩. সেট স্কোয়ারের সাহায্যে রেখা দুটির ছেদ বিন্দুতে লম্ব রেখা টানতে হবে ।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৪. এবার বস্তুর সবদিকের মাপ রেখা সমূহ হতে কেটে নিতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৫. মাপ নেয়া বিন্দুসমূহ থেকে লম্ব ও 30° কোণে ডান ও বাম পাশে রেখাসমূহ আঁকতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৬. বস্তুর প্রয়োজনীয় অংশসমূহ রেখে বাকি অংশসমূহ ইরেজারের সাহায্যে মুছে মূল বস্তুটিকে গাঢ় করতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

অবলিক ভিউ (Oblique View)

বস্তুর সম্মুখ (Front) ভিউ ভূমির সাথে সমান্তরাল এবং পার্শ্ব (Side) ও উপরের (Top) ভিউ 45° কোণ করে ধরলে বস্তুটিকে যেরুপ দেখা যায় তাকে ঐ বস্তুর অবলিক ভিউ (Oblique View) বলে। এটিও আইসোমেট্রিক ভিউর ন্যায় বস্তুর একটি ত্রি-মাত্রিক কাল্পনিক ভিউ যাতে বস্তুর সম্মুখ (Front), পার্শ্ব (Side) ও উপরের (Top) ভিউ দেখা যায়, ফলে একটি ভিউতে বস্তুর বাস্তব চেহারা বোঝা যায় ।

অবলিক ভিউর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ

  • এতে বস্তুর সম্মুখ (Front) ভিউ বেশি গুরুত্ব পায়,
  • অন্য ভিউ বা পার্শ্বসমূহ শুধু গভীরতা (Depth) দেখানো হয়
  • সকল Inclined বা নত রেখাসমূহ 45° কোণে থাকে,
  • লম্ব রেখাসমূহ লম্বই থাকবে,
  •  অনুভূমিক রেখা থাকবে ।

 বস্তুর অবলিক ভিউ অঙ্কন প্রণালি

১. কোনো বস্তু অঙ্কনের সময় প্রথমে হালকা করে ভূমি বা একটি অনুভূমিক রেখা অঙ্কন করতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

২. সেট স্কোয়ারকে প্যারালাল বার বা টী স্কোয়ার এর উপর সেট করে ভূমির সমান্তরাল করে অনুভূমিক ও লম্ব রেখা দিয়ে সম্মুখ (Front) ভিউ আঁকতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৩. 45° সেট স্কোয়ারকে প্যারালাল বার বা টী স্কোয়ার-এর উপর সেট করে 45° কোণে ডান পাশে সম্মুখ দৃশ্যের বিন্দুসমূহকে ছেদ করিয়ে তিনটি লাইন বা রেখা আঁকতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৪. এবার পাশের চিত্রের মত করে 45° কোণের রেখাসমূহ থেকে বস্তুর মাপ কেটে নিতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৫. সেট স্কোয়ারের সাহায্যে রেখাসমূহের ছেদ বিন্দুতে লম্ব রেখা টানতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

 

৬. বস্তুর প্রয়োজনীয় অংশসমূহ রেখে বাকি অংশসমূহ ইরেজারের সাহায্যে মুছে মূল বস্তুটি গাঢ় করতে হবে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

অর্থোগ্রাফিক ভিউ (Orthographic View)

একটি তলের উপর কোনো দৃশ্য বা ভিউ অবস্থিত থেকে যখন প্রজেকশন রেখাসমূহ একে অন্যের সমান্তরাল এবং প্রজেকশন প্লেনে ( Projection Plane) তা লম্বভাবে অবস্থান করে, তাকে সমরূপীয় অভিক্ষেপ বা অর্থোগ্রাফিক ভিউ (Orthographic View) বলে। Ortho শব্দের অর্থ Straight বা Right Angle অর্থাৎ লম্ব বা সমকোণ আর Graphic অর্থ Drawn বা অঙ্কন। তাই অর্থোগ্রাফিক ভিউকে লম্ব বা সমকোণে অঙ্কন বোঝায় ।

ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং বা স্থাপত্যিক ড্রয়িং-এ প্রায় সর্বত্রই অর্থোগ্রাফিক ভিউ অঙ্কন করা হয়। এতে দৃশ্যের প্রতিটি রেখা প্রকৃত মাপে থাকে তাই দৃশ্য থেকে সরাসরি মাপ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বস্তুর একটি মাত্র ভিউ থেকে-এর আসল রূপ বোঝা যায় না। বস্তুর আসল রূপ ও গঠন বোঝার জন্য দুই বা ততাধিক ভিউ একযােেগ দেখার প্রয়োজন হয়। এ কারণে এটি সহজবোধ্য নয় এবং অঙ্কনপ্রণালিও অপেক্ষাকৃত জটিল।

প্রচলিত পদ্ধতিতে অর্থোগ্রাফিক ভিউ দুই প্রকারে অঙ্কিত হয়

  • প্রথম কোণীয় পদ্ধতি বা বৃটিশ পদ্ধতি ও
  • তৃতীয় কোণীয় পদ্ধতি বা আমেরিকান পদ্ধতি

অর্থোগ্রাফিক ভিউ অঙ্কনের দুইটি পদ্ধতির মধ্যে তৃতীয় কোণীয় পদ্ধতি সর্বাধিক প্রচলিত। অনুভূমিক ও লম্বতল দুটিকে পরস্পর ছেদ করে বর্ধিত করলে চারটি লম্ব কোণ উৎপন্ন হয়।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

এই কোণগুলোকে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ কোণ বলে। ব্রিটিশ পদ্ধতিতে বস্তুটিকে ১ম কোণে অবস্থিত বলে অনুমান করা হয় এবং আমেরিকান পদ্ধতিতে বস্তুটিকে ৩য় কোণে অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়।

দুইটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

 

বিষয়

ব্রিটিশ পদ্ধতি

আমেরিকান পদ্ধতি

১. বস্তুর অবস্থানবস্তুটিকে ১ম কোণে (0°- 90°) অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়।বস্তুটিকে ৩য় কোণে ( 180° – 270°) অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়।
২. ভিউসমূহের অবস্থানভিউ সমূহ নিজ অবস্থান থেকে উল্টা অবস্থানে থাকে। যেমন— উপরের (Top) ভিউ নিচে (Bottom), ৰাম পার্শ্বের ভিউ (Left Side) ডান পার্শ্বে (Right Side) ডান পার্শ্বের ভিউ বাম পার্শ্বে ও সম্মুখ (Front) ভিউ পিছনে (Back) অবস্থান করে।ভিউসমূহ নিজ অবস্থানে থাকে অর্থাৎ উপরের (Top) ভিউ উপরে, নিচের (Bottom) ভিউ নিচে, বাম পার্শ্বের ভিউ (Left Side) ৰাম পার্শ্বে, ডান পার্শ্বের (Right Side) কিউ ডান পার্শ্বে ও সম্মুখ (Front) ভিউ সম্মুখে অবস্থান করে ৷
৩. ব্যবহারতুলনামূলক কম ব্যবহৃত হয়।সকল কাজ মূলত এই পদ্ধতিতেই করা হয়।
৪. বোধগম্যতাউল্টা অবস্থানে থাকে বলে তুলনামূলক  দুর্বোধ্য।নিজ অবস্থানে থাকে বলে তুলনামূলক সহজবোধ্য।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

৩য় কোণীর বা আমেরিকান পদ্ধতিতে ভিউ সমূহ অঙ্কন

  • বস্তুটিকে ৩য় কোণে (180°-270°) অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়।
  • ভিউসমূহ নিজ অবস্থানে থাকে।
  • উপরের (Top) ভিউ উপরে,
  • নিচের (Bottom) ভিউ নিচে,
  • বাম পার্শ্বের ভিউ (Left Side) বাম পার্শ্বে,
  • ডান পার্শ্বের (Right Side) ভিউ ডান পার্শ্বে, এবং
  • সম্মুখ (Front) ভিউ সম্মুখে অবস্থান করে।

 

আর্কিটেকচারে ভিউ

 

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ভিউ কাকে বলে?

২. সাধারণভাবে ভিউ কত প্রকার ও কি কি?

৩. ইঞ্জিনিয়ারিং/আর্কিটেকচারে ভিউ কত প্রকার ও কি কি?

৪. আইসোমেট্রিক ভিউ কাকে বলে?

৫. অবলিক ভিউ কাকে বলে?

৬. অর্থোগ্রাফিক ভিউ কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. আইসোমেট্রিক ভিউ-এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর ।

২. অবলিক ভিউ-এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

৩. অর্থোগ্রাফিক ভিউ-এর ৩য় কোণীয় পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

রচনামূলক প্রশ্ন

১. আমেরিকান (৩য় কোণীয়) ও ব্রিটিশ (১ম কোণীয়) পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।

২. আইসোমেট্রিক ভিউ অঙ্কনপ্রণালি বর্ণনা কর ।

৩. অবলিক ভিউ অঙ্কনপ্রণালি বর্ণনা কর।

৪. আইসোমেট্রিক ভিউ ও অবলিক ভিউ-এর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment