আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ড্রয়িং এর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি-এর ব্যবহার। এই পাঠটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের, এসএসসি পর্যায়ের, ভোকেশনাল ডিসিপ্লিনের “আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড ১” বিষয়ের একটি পাঠ।
Table of Contents
ড্রয়িং এর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি-এর ব্যবহার
ড্রয়িং এর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি-এর ব্যবহার
মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহ হচ্ছে — অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। যার প্রতিটি ক্ষেত্রই কারিগরি শিল্পের উপর প্রত্যক্ষ বা পরাক্ষেভাবে নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি হয়েছে পরিবর্তন হয়েছে রুচিরও। এখন সভ্য মানুষের শুধু মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেই হয় না, খাবার প্রস্তুতের জন্য চাই আধুনিক রান্নাঘর, খাওয়ার জন্য চাই চেয়ার-টেবিল,
পরিধানের পোশাক রাখার জন্য কেবিনেট এবং সজ্জার জন্য ড্রেসিং টেবিল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এবং সর্বোপরি থাকার জন্য সর্বাধুনিক বাড়ি। সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন শিল্প ও বিজ্ঞানের সংমিশ্রণে সৃষ্ট অন্যতম কারিগরি শিল্প আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য শিল্প। স্থাপত্যের ছোঁয়াবিহীন কাঠামো বাড়ি, আসবাব, যে কোনো বিল্ডিং বা ভবন প্রাণহীন খাঁচা মাত্র।
প্রতিটি শিল্পের নিজস্ব কিছু ভাষা রয়েছে যেমন গানের জন্য স্বরলিপি ঠিক তেমনি স্থাপত্যের তথা সমগ্র কারিগরের জন্য ভাষা হচ্ছে ড্রয়িং ও ড্রাফটিং। ড্রয়িং ও ড্রাফটিং-এর মাধ্যমে প্রকৌশলী, স্থপতি, কারিগর প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণির শিল্প শ্রমজীবীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। নির্মাণ ক্ষেত্রে বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে যা প্রকাশ সম্ভব হয় না ড্রয়িং বা অঙ্কনের মাধ্যমে তা অতি ক্ষুদ্র পরিসরে অল্প সময়ে প্রকাশ ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
ড্রাফটিং কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদিসমূহ
- ড্রয়িং বোর্ড, ড্রাফটিং টেবিল বা ডেস্ক
- টি স্কয়ার পেনসিল
- প্যারালাল বার
- যন্ত্রপাতির সেট
- সেট স্কয়ার (45° ও 30° 60° )
- ট্রায়েগুলার স্কেল
- ইরেজার
- ইরেজিং শিল্ড
- কম্পাস/ডিভাইডার
- ডাস্টার
- (HB, B, 2B) পেনসিল
- ড্রাফটিং পেন ও কালি
- ফ্ৰেঞ্চ কাৰ্ভ
- লেটারিং টেম্পলেট
- সার্কুলার টেম্পলেট
- পেনসিল সার্পনার
- ড্রয়িং শিট বা কাগজ
- ড্রাফটিং টেপ
ড্রাফটিং কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদিসমূহের ব্যবহার বিধি নিম্নরূপ
পেনসিলঃ ড্রয়িং করার প্রাথমিক অপরিহার্য উপকরণ পেনসিল। ড্রয়িং করার জন্য পেনসিলসমূহকে সীসের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন – নরম পেনসিল ও শক্ত পেনসিল। নরম পেনসিলসমূহকে B ও শক্ত পেনসিলসমূহকে H দিয়ে প্রকাশ করা হয়। সাধারণ কাজের জন্য মধ্যম মানের পেনসিল (HB) ব্যবহার করা হয়। গাঢ় রেখা টানার জন্য B এবং সরু বা হালকা রেখা টানার জন্য H পেনসিল ব্যবহার করা হয়।
প্যারালাল বার বা টি-স্কয়ার:
সেট স্কয়ার:
এটি এক ধরনের কৌণিক স্কেল বিশেষ। সাধারণ সেট কয়ারের দুটি অংশ থাকে একটি 45° 45°- 90° ও অন্যটি 30°-60°-90° । এর সাহায্যে খাড়া বা হেলানো রেখাসমূহ টানা হয়। এই সেট গিয়ে সর্বনিম্ন 15° কোণ পর্যন্ত কৌণিক রেখা টানা যায়। ড্রয়িং কাজে আর এক ধরনের সেট করার ব্যবহৃত হয় যাকে অ্যাডজাস্টেবল সেট স্কয়ার বলে। এর সাহায্যে খাড়া বা যে কোনো কোণে লাগানো রেখাসমূহ টানা যায়। এটি যে কোনো কোণেই অ্যাডজাস্ট করা যায় ।
কম্পাস/ডিভাইডার:
কম্পাস বা ডিভাইডারকে কাটাও বলে। স্কেল থেকে মাপ নেয়ার জন্য, দুটি বিন্দুর দূরত্ব নেয়ার জন্য ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। ডিভাইভারের বা কাটার পাদুটির জ্ বা সংযোগ স্থলটি ঢিলা হয়ে গেলে এর সাহায্যে সঠিক মাপ নেয়া সম্ভব হবেনা ।
বৃত্ত আঁকার জন্য বা যে কোনো বক্ররেখা আঁকার জন্য পেনসিল কম্পাস ব্যবহার করা হয়। এর একটি পা সুচালো অন্য পারে পেনসিল বা সীল অটিকানো থাকে। পা দুটির সংযোগটি ফ্লু নিয়ে লাগানো থাকে যার সাহায্যে যে কোনো দূরত্বে অ্যাডজাস্ট করা যায় বা ছোটো বড় করে বৃত্ত বা আর্ক (বৃত্তচাপ) অঙ্কন করা যায়। ইরেজার: নরম রাবার দিয়ে তৈরি বলে ইরেজারকে রাবার বলা হয়।
পেনসিলে অঙ্কিত অপ্রয়োজনীয় বা ভুল অংশ মুছে ফেলার জন্য ইরেজার ব্যবহার করা হয়। তবে এটি কম ব্যবহার করাই ভালো। বেশি ব্যবহারে ড্রয়িং শিট অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।
ইয়েজিং শিক্ষ :
ড্রয়িং-এর মাঝের কোনো সরু স্থানের বা জটিল কোনো ড্রয়িং-এর চিকন কোনো রেখা বা অক্ষর মুছে ফেলতে ইরেজিং শিশু ব্যবহৃত হয়। এটি ধাতব পাতের সেলুলয়েডের তৈরি হয়। স্কেল ও ট্রারেঙ্খলার স্কেল: স্কেল ও ট্রায়েগুলার স্কেল-এর সাহায্যে সাধারণত: ড্রয়িং-এর বিভিন্ন মাপ গ্রহণ করা হয়। ট্রায়েজ্ঞলার স্কেল ফুট বা মিটার দুই ধরনের হতে পারে। এতে মোট ৬দিকে ১১টি যাগ স্কেল অঙ্কিত থাকে।
ফ্রেঞ্চ কার্ড:
অসম বক্ররেখা অঙ্কন করতে বা কম্পাসের সাহায্যে যে সকল রেখা অঙ্কন করা যায় না এমন বক্র রেখা অঙ্কন করতে ফ্রেঞ্চ কার্ড ব্যবহার করা হয়।
প্রটেকটর বা চাঁদা:
যে কোনো কৌণিক মাপ নেয়ার জন্য প্রটেকটর বা চাঁদা ব্যবহার করা হয়।
ড্রয়িং শিট:
ড্রয়িং করার জন্য বিভিন্ন প্রকার কাগজ ব্যবহার করা হয় যেমন কার্টিজ পেপার, ট্রেসিং পেপার, বাটার পেপার ইত্যাদি। ড্রয়িং কাগজের মাপ আইএসও (ISO) স্টান্ডার্ড অনুযায়ী Ag থেকে A4 পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শিট লে আউট
ড্রয়িং শিট বোর্ডে স্থাপন করে প্যারালাল বারের সাহায্যে শিটের নিম্নপ্রাপ্ত ও বারের নিম্নপ্রাপ্ত মিলিয়ে নিতে হবে। এবার ড্রাফটিং টেপের সাহায্যে চার কোণায় আটকে নিতে হবে। শিট লে আউট করার ও শিরোনাম লেখার জন্য বিভিন্ন মাপ রয়েছে। যেমন শিটের বামপ্রান্তে 1″ বা ” ও অন্যান্য প্রান্তে »” বা ½” করে মার্জিন টানতে হয়। শিরোনাম লেখার জন্য শিটের কোণায় বক্স একে বা নিচে অথবা ডানপ্রান্তে 1″ লম্বা করে রেখা টেনে এতে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু লেখা হয়।
অর্থাৎ, একটি ড্রয়িং শিটের মার্জিন টানার পর সম্পূর্ণ অংশকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি অংশে শিরোনাম লিখা হয় অন্য অংশটি ড্রয়িং এরিয়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
ড্রয়িং শিটের নিচে শিরোনাম
প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ড্রয়িং করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমূহের নাম লেখ।
২. পেনসিল কত প্রকার ও কী কী?
৩. কোন ধরনের পেনসিল কি কাজে ব্যবহার করা হয়, লেখ।
৪. ফেঞ্চ কার্ড কেন ব্যবহার করা হয়?
৫. প্যারালাল বারের কাজ কী?
৬. ডিভাইডার কত প্রকার ও কী কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সেট স্কয়ারের ব্যবহার বর্ণনা কর।
২. প্রটেক্টর বা চাঁদার কাজ বর্ণনা কর।
৩. ইরেজিং শিল্ড-এর ব্যবহার বর্ণনা কর।
৪. ড্রয়িং শিটে শিরোনাম লেখার পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ড্রয়িং-এ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহের ব্যবহার আলোচনা কর ।
২. বিভিন্ন প্রকার পেনসিলের ব্যবহার বর্ণনা কর ।
৩. প্যারালাল বার ও সেট স্কয়ার-এর ব্যবহার ও পার্থক্য বর্ণনা কর ।
৪. ট্রায়েগুলার স্কেল-এর ব্যবহার চিত্রসহ বর্ণনা কর।
৫. ড্রয়িং শিট লে-আউট করার পদ্ধতি বর্ণনা কর।
আরও দেখুন :