প্রিজমেটিক কম্পাস ও সার্ভেয়ার’স কম্পাস এর সাহায্যে বিয়ারিং মাপন – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” এর “ব্যবহারিক” পাঠ এর অংশ|
Table of Contents
প্রিজমেটিক কম্পাস ও সার্ভেয়ার’স কম্পাস এর সাহায্যে বিয়ারিং মাপন
উত্তর রেখা হতে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানাবর্তে কোনো রেখা পর্যন্ত অনুভূমিক কোণকে ঐ রেখার বিয়ারিং বলা হয়। বিয়ারিংকে পূর্ণবৃত্ত বিয়ারিং ও হ্রাসকৃত বিয়ারিং— এই দু ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে পূর্ণবৃত্ত বিয়ারিং 0° হতে মধ্যে 360° পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং হ্রাসকৃত বিয়ারিং 0° হতে 90° হয়ে থাকে, তবে এতে দিক উল্লেখ করতে হয়।
প্রিজমেটিক কম্পাসে চুম্বক শলাকা ও পাঠমানের ভাগচক্র একই সাথে থাকে এবং আইভেন সংলগ্ন প্রিজমের ভিতর দিয়ে ভাগচক্রের পাঠমান পড়তে হয় এবং পাঠমানের ভাগচক্রে উত্তর দিকের স্থলে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ দিকের স্থলে উত্তর লেখা থাকে। তা ছাড়া দক্ষিণে 0°, পশ্চিমে 90°, উত্তরে 180° এবং পূর্বে 270° লেখা থাকে বিধায় আইভেন পাঠ পড়াকালে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিকের আবর্তের মানই ভাগচক্রে পাওয়া যায়। ফলে প্রিজমেটিক কম্পাসে পূর্ণবৃত্ত বিয়ারিং-এ পাঠমান পাওয়া যায়। সার্ভেয়ার্স কম্পাসে চুম্বক শলাকা ভাগচক্রের সাথে যুক্ত থাকে না।
বরং ভাগচক্র কম্পাস বক্সের সাথে যুক্ত থাকে, ফলত দৃষ্টি রেখার সাথে ভাগচক্রও ঘুরে এবং এতে কম্পাস শলাকার উত্তর প্রান্তেই পাঠমান পড়তে হয়। এতে উত্তর দিকে ও দক্ষিণ দিকে 0° এবং পূর্ব দিকে ও পশ্চিম দিকে 90° লেখা থাকে। তা ছাড়া পূর্ব এর স্থলে পশ্চিম এবং পশ্চিমের স্থলে পূর্ব লেখা থাকে। তাই এর পাঠমান হ্রাস বিয়ারিং পড়া হয় এবং পাঠমানের সাথে দিক উল্লেখ করতে হয়।
যন্ত্রপাতি :
১। প্রিজমেটিক কম্পাস তেপায়া বা স্ট্যান্ডসহ
২। সার্ভেয়ার্স কম্পাস তেপায়াসহ
৩। রেঞ্জিং রড
৪। অ্যারো
১। ঈন্সিত রেখার দু’প্রান্ত চিহ্নিত করতে হবে।
২। প্রারম্ভ প্রান্তে (A) অ্যারো বসিয়ে এবং সমাপ্তি প্রান্তে (B) রেঞ্জিং রড উল্লম্বভাবে পুঁততে হবে।

৩। A স্টেশনে তেপায়া বা স্ট্যান্ড এর মাথায় প্রিজমেটিক কম্পাস যথাযথভাবে অস্থায়ী সমন্বয় (লেভেলিং, সেন্টারিং ও প্রিজম ফোকাসিং) করে বসাতে হবে।
৪। এবার কম্পাস বাক্স ঘুরিয়ে চুম্বক শলাকার মুক্ত সঞ্চারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৫। তারপর কম্পাস বক্স ঘুরিয়ে আইডেনের চেরা পথে দেখে অবজেক্ট ভেনের হেয়ার ও B স্টেশনের রেঞ্জিং রড একই দৃষ্টি রেখায় আনতে হবে ।
৬। এখন আই ভেনের সাথে স্থাপিত প্রিজমের ভিতর দিয়ে চুম্বক শলাকা ও ভাগচক্রের কম্পনহীন অবস্থায় ভাগচক্রের পাঠমান নিতে হবে। এ প্রাপ্ত পাঠমানই AB রেখার বিয়ারিং অর্থাৎ AB রেখার সম্মুখ বিয়ারিং ।
৭। একইভাবে AB রেখার সমাপ্তি স্টেশনে (B) প্রিজমেটিক কম্পাস বসিয়ে A স্টেশনের দিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাকিয়ে ধাপ (৫) ও (৬) অনুসরণ করে প্রাপ্ত পাঠমান হবে BA রেখার বিয়ারিং অর্থাৎ AB রেখার পশ্চাৎ বিয়ারিং।
* যে-কোনো রেখার সম্মুখ ও পশ্চাৎ বিয়ারিং এর পার্থক্য 180°। যদি প্রাপ্ত পাঠমানের অর্থাৎ AB রেখার সম্মুখ
ও পশ্চাৎ বিয়ারিং পার্থক্য 180° না হয় এবং কম্পাস ও পাঠগ্রহণ যথাযথ থাকে অর্থাৎ সকল দিক ত্রুটিমুক্ত থাকে তাহলে বুঝতে হবে A স্টেশন বা B স্টেশন বা উভয় স্টেশন স্থানীয় আকর্ষণে প্রভাবিত।
সার্ভেয়ার্স কম্পাসে বিয়ারিং পরিমাপকরণ :-
এক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত কাজের ধারাগুলো অনুসরণ করতে হবে। তবে শুধুমাত্র প্রিজমেটিক কম্পাসের স্থলে তেপায়ার মাথায় সার্ভেয়ার্স কম্পাস বসাতে হবে এবং ভাগচক্রের পাঠমান অর্থাৎ বিয়ারিং পড়ার সময় দৃষ্টিপাতের নিচে দৃষ্টি রেখায় প্রিজমের ভিতর দিয়ে না পড়ে চুম্বক শলাকার উত্তর প্রান্ত বরাবর ভাগচক্রের পাঠমান পড়তে হবে এবং পাঠমান দিকসহ উল্লেখ করতে হবে। সকল দিক ত্রুটিমুক্ত হলে এতে সম্মুখ ও পশ্চাৎ বিয়ারিং এর পার্থক্য হবে 0° এবং উল্লিখিত দিক পরস্পর বিপরীত হবে। এর ব্যতিক্রমে প্রথম স্টেশন বা শেষ স্টেশন বা উভয় স্টেশন স্থানীয় আকর্ষণে প্রভাবিত ।
সাবধানতা :
কম্পাসের সাহায্যে বিয়ারিং মাপাকালে নিম্নের সাবধানতাগুলো মেনে চলতে হবে :
১। কম্পাসটি অনুভূমিকভাবে রেখে পাঠ গ্রহণ করতে হবে।
২।ভাগচক্রের সঠিক দিক থেকে পাঠ পড়তে হবে।
৩।পাঠ গ্রহণকালে কম্পাসকে হাতে ধরা যাবে না ।
8।পাঠ দর্শন ও পাঠ গ্রহণকালে পায়ার (Leg) দু’পাশে পা দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না ।
৫ ।চুম্বক শলাকা স্থির হওয়ার পর পাঠ গ্রহণ করতে হবে। (শলাকার কম্পন থামানোর জন্য প্রয়োজনে ব্রেক পিনে চাপ দিতে হবে। এতে শলাকা স্থির হওয়ার পর ঘর্ষণজনিত বাধামুক্তির জন্য বাক্সে স্বাভাবিকভাবে টোকা দিতে হবে।)
৬। চুম্বক আকৰ্ষিত বস্তু (চাবি, পিন, চশমার ফ্রেম ইত্যাদি) কম্পাসের নিকট আনা যাবে না। রেলপথ ও বৈদ্যুতিক লাইন হতেও দূর থাকতে হবে।
৭। ঘর্ষণের ফলে স্থির বিদ্যুৎ সঞ্চার হয়ে চুম্বক শলাকা ঢাকনার কাচের সাথে লেগে যেতে পারে বিধায় কাজের সময় কাচ ঘষা যাবে না ।
৮।স্থানান্তরকালে ও কাজ শেষে চুম্বক শলাকা আল (pivot) থেকে উঠিয়ে রাখতে হবে।
৯।ভুলত্রুটি পরিহারের জন্য প্রত্যেকটি পাঠ একাধিকবার গ্রহণ করতে হবে।
১০। বাধাবিপত্তি বা অন্য যে-কোনো অসুবিধার কারণে কোনো রেখার প্রান্ত হতে বিয়ারিং গ্রহণ সম্ভব না হলে ঐ রেখার যে- কোনো স্থান হতে অথবা ঐ রেখার সমান্তরাল অন্য কোনো রেখার যে-কোনো বিন্দু হতে বিয়ারিং নেয়া যাবে।
১১। বস্তুপাতের আয়না উপরে তুলে ভাঁজ করে কম্পাস বন্ধ করতে হবে।
আরও দেখুনঃ